আসল দোষী সঞ্জয়ই: কী বলল কলকাতা পুলিশ? আর কী-ই বা বলল সিবিআই https://ift.tt/2pnwmWQ - MAS News bengali

আসল দোষী সঞ্জয়ই: কী বলল কলকাতা পুলিশ? আর কী-ই বা বলল সিবিআই https://ift.tt/2pnwmWQ

আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের তদন্তে নেমে মূলত তিনটি প্রমাণের উপর ভিত্তি করে সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। যার মধ্যে একটি ছিল সেমিনার রুমের বাইরে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ। যেখানে সঞ্জয়কে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। দ্বিতীয় প্রমাণ হিসেবে পুলিশের হাতে উঠে আসে অভিযুক্তর ব্যবহার করা ব্লুটুথ হেডফোন। সেই হেডফোনটি 'পেয়ার' করা ছিল সঞ্জয়ের মোবাইল ফোনের সঙ্গে। তৃতীয় আরও একটি বিষয় মিলে যায় কলকাতা পুলিশের চতুর্থ নম্বর ব্যাটেলিয়নে গিয়ে। তদন্তকারীরা দেখতে পান, আগের দিন রাতে পরে থাকা পোশাক সকাল বেলায় ধুয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিষ্কার করার চেষ্টা হয়েছে জুতোও। পুলিশ কর্তাদের মতে ধারণা হয় যে, জামা-প্যান্ট কাচলেও জুতো ও ভাবে সাধারণত কেউ ধুয়ে দেয় না। ওই জুতোতে হালকা রক্তের দাগও দেখা যায়। পুলিশের দাবি, জেরার সময় তদন্তকারীদের কাছে সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সঞ্জয় জানায়, রাত বারোটার পরে আরও এক সিভিক ভলান্টিয়ার (নাম: সৌরভ ভট্টাচার্য)-এর সঙ্গে লেখা বাইকে চেপে সে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ের একটি জায়গায় গিয়ে মদ্যপান করে। এরপর দু’জনে 'রিল্য়াক্স' করার জন্য পৌঁছে যায় সোনাগাছিতে। কিন্তু সেখানে পুলিশ পরিচয় দিয়ে দরদাম করতে গেলে প্রবল ঝামেলা শুরু হয়। ওখানকার এক মাসি দু’জনকে বলেন, 'ও সব পুলিশ-টুলিশ বলে এখানে কোনও লাভ হবে না।' কার্যত অপমানিত দুই সিভিক ভলান্টিয়ার সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। আচমকা একজন পরিচিতর অপারেশনের কথা মনে হতেই সঞ্জয়ের ইচ্ছেয় দু’জনে আরজি করে গিয়ে জানতে পারে, সে দিন তাঁর অপারেশন হয়নি। বাইরে এসে ফের এক দফা মদ্যপান করে তাদের পরবর্তী গন্তব্য হয় দক্ষিণ কলকাতার চেতলা এলাকার একটি যৌনপল্লিতে। পকেটে পয়সা না থাকায় সৌরভ একজনের ঘরে ঢুকতে পারলেও বাইকে বসে থাকতে হয় সঞ্জয়কে। সেখানে মশার কামড় খেতে-খেতে এক পরিচিত মহিলাকে ভিডিয়ো কল করে সে। পুলিশকে সে জানায়, প্রায় তিনবার কল করলেও অন্যপ্রান্তের মহিলা 'দিদি' ফোন কেটে দিচ্ছিলেন। যদিও সিবিআই সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই মহিলাকে ন্যুড ছবি পাঠাতে বলে সঞ্জয়। তিনি তা পাঠিয়েও দেন। যদিও পরের দিন তা নিজের সেট থেকে মুছে দেন ওই মহিলা। ওই ছবি সঞ্জয়ের মোবাইল থেকে পরে উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে সৌরভ বাইরে এলে ফের একবার আরজি করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় অভিযুক্ত। হাসপাতালে পৌঁছনোর পরে আর অপেক্ষা না করে সৌরভ একটি অ্যাপ-ক্যাব বুক করে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। এ দিকে, মদ্যপ সঞ্জয় বাইক স্ট্যান্ড করে প্রথমে ইমারজেন্সি, তারপর দোতলায় পৌঁছে যায়। সেখানে বেশ কয়েকটি ঘরে 'কাউকে' খোঁজার চেষ্টা করে সরাসরি উঠে পড়ে তিন তলায়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গলায় হেডফোন ঝোলানো অবস্থায় সে এগিয়ে যাচ্ছে। এরপর প্রায় ৪৫ মিনিট পরে তাকে আবার বেরিয়ে যেতেও দেখা গিয়েছে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, বাইরে গিয়ে নিজের বাইকে স্টার্ট করে সঞ্জয় সোজা চলে যায় চতুর্থ ব্যাটেলিয়নে নিজের থাকার জায়গায়। অত্যধিক মদ খাওয়ার জেরে ঘুমিয়ে পড়ে সে। পরের দিন সকালে খুনের ঘটনা টিভিতে দেখানো শুরু হতেই দ্রুত উঠে নিজের আগের দিনের জামা-প্যান্ট এবং জুতো ধুয়ে ফেলে সে। যদিও তার কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে হাজির হয়ে যান কলকাতা পুলিশের অফিসারেরা। জেরায় সঞ্জয় জানায়, সেমিনার রুমে আধো অন্ধকার ছিল। একজন মহিলাকে সেখানে চাদর ঢাকা দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখে সে মুখ এবং গলা টিপে ধরে। ঘুমন্ত অবস্থায় থাকায় তিনি তেমন কোনও প্রতিরোধ করতে পারেননি। এরপর ধর্ষণ করতে শুরু করলে জেগে ওঠেন ওই তরুণী চিকিৎসক। এ বার তাঁর মাথা ঠুকে দেওয়া হয়। তাতেই কার্যত মৃত্যু হয় তাঁর। তদন্তকারীদের ধারণা, সম্ভবত ধর্ষণ করার সময় বাধা দিতে গেলে নৃশংস অত্যাচার করা হয় তরুণীর উপর। এ দিকে, সিবিআই-এর তরফে যে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ৯ অগস্ট রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ সঞ্জয়কে লালবাজারের তরফে ডেকে পাঠানো হয়। রাতভর জেরা করার পর, পরের দিন অর্থাৎ ১০ তারিখ সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে একটি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। তার সোয়াব, নেইল ক্লিপিংস নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। এসএসকেএম-এর ফরেন্সিক বিভাগের তরফে বিশ্বনাথ সোরেন জানান, সঞ্জয়ের দেহে পাঁচটি ক্ষতচিহ্ন ছিল, যেগুলি ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা আগের। কলকাতা পুলিশের তদন্তে উঠে আসা তথ্য়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সিবিআই-এর চার্জশিটে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে প্রথমবার বিয়ে করে সঞ্জয়। ২ মাসের মধ্য়ে তার স্ত্রী চলে যাওয়ার পর ২০১৬-১৭ সালে এক বিধবাকে সঞ্জয় বিয়ে করে। দ্বিতীয় স্ত্রীও সঞ্জয়কে ছেড়ে চলে যান। এর পর সঞ্জয় যাঁকে বিয়ে করে, সেই মহিলা ক্য়ান্সারে মারা যান। ২৯ অক্টোবর, ২০১৮ থেকে ডিজ়াস্টার ম্য়ানেজমেন্ট গ্রুপে সিভিক ভলান্টিয়ার হিসাবে কাজে যোগ দেয় সঞ্জয়। ধৃত সঞ্জয়ের কাছ থেকে ‘ভবানীপুর বক্সিং অ্য়াসোসিয়েশন’-এর একটি সার্টিফিকেট উদ্ধার করা হয়েছে, যার উল্লেখ রয়েছে সিবিআই-এর চার্জশিটে। চতুর্থ ব্য়াটেলিয়নে থাকার সময় থেকেই সহকর্মী এবং তাঁদের পরিবারের লোকজনকে আরজি করে চিকিৎসা পরিষেবা পাইয়ে দেওয়ার বিষয়টি দেখাশোনা করত। আরজি কর-এ যাওয়ার জন্য় যে মোটরবাইকটি সে ব্য়বহার করত, তা ১৮ নম্বর লালবাজার স্ট্রিট অর্থাৎ কলকাতার পুলিশ কমিশনারের নামে রেজিস্টার্ড। চার্জশিট অনুযায়ী, কলকাতা পুলিশের এএসআই অনুপকুমার দত্তের কাছে ‘রিপোর্ট’ করত সঞ্জয়। কলকাতা পুলিশের তদন্তে সৌরভ ভট্টাচার্য নামে যে সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম উঠে এসেছিল, তারও উল্লেখ রয়েছে সিবিআই-এর চার্জশিটে। ৮ অগস্ট সৌরভকে সঙ্গে নিয়ে তার (অর্থাৎ সৌরভের) এক তুতো ভাইয়ের চিকিৎসার কারণে আরজি কর-এ যায় সঞ্জয়। এর পর তারা শোভাবাজারে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্য়াঙ্কে যায় এএসআই অনুপকুমার দত্তের অ্য়াকাউন্টে টাকা জমা দিতে। কিন্তু ব্য়াঙ্ক বন্ধ থাকায় সেই টাকা দিয়ে তারা মদ খায়। এর পর সঞ্জয় হাসপাতালে ফিরে যায়। রাত পৌনে ১১টা নাগাদ সঞ্জয় সৌরভকে ফোন করে ডেকে পাঠানোর পর ফের মদ খায় তারা। সঙ্গে খাবারও খায়। এর পর চেতলা এলাকার ‘রেড লাইট এরিয়া’-য় যায় দু’জনে। সেখানে একজনের কাছ থেকে বিয়ার কিনে সৌরভ এক যৌনকর্মীর ঘরে ঢুকে গেলেও সঞ্জয় কারও ঘরে ঢুকতে পারে না। সে বাইরে বসে বিয়ার খেতে তাকে। রাত ৩টে ২০-তে আরজিকর হাসপাতালে ফিরে আসে সঞ্জয়-সৌরভ দু’জনেই। সৌরভ ব্য়ারাকে ফিরে গেলেও সঞ্জয় ফার্স্ট ফ্লোরে ট্রমা কেয়ার সেন্টারে শুভ দে নামে একজনের ব্য়াপারে খোঁজ নিতে যায়, যার অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। ওই ব্য়ক্তির খোঁজ না পেয়ে প্রথমে ফোর্থ ফ্লোর এবং তার পর ভোর ৪টে ৩ মিনিটে থার্ড ফ্লোরে চেস্ট মেডিসিন-এর ইমার্জেন্সিতে নেমে আসে সঞ্জয়। এর পর সেমিনার রুমে গিয়ে ধর্ষণ ও খুন করে ৪টে ৩২ মিনিটে ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে যায় সঞ্জয়। যোগেন্দ্র সাউ নামে এক সিকিওরিটি গার্ডের সঙ্গে কথা বলে তারপরই সঞ্জয় সেমিনার রুমে ঢোকে বলে চার্জশিটে জানিয়েছে সিবিআই। কলকাতা পুলিশের তদন্তে দ্বিতীয় প্রমাণ হিসেবে সঞ্জয়ের ব্যবহার করা ব্লুটুথ হেডফোনের সঙ্গে তার মোবাইলের 'পেয়ারিং'-এর বিষয়টিরও উল্লেখ রয়েছে সিবিআই-এর চার্জশিটে। প্রথমে সেই ব্লুটুথ হেডফোনটি নির্যাতিতার বলে সন্দেহ করেছিল পুলিশ। তাঁর মা-বাবাকে জিজ্ঞাসা করে অবশ্য় পুলিশ পরে নিশ্চিত হয় যে, সেটি সঞ্জয়ের। নির্যাতিতার যে পাওয়ার গ্লাস (চশমা) মিসিং ছিল, সেটি সঞ্জয়ের অত্য়াচারের সময় ভেঙে যায় বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেছে সিবিআই। শুধু তাই-ই নয়, নির্যাতিতার পোশাকের বিভিন্ন জায়গার সেলাই ছিঁড়ে যাওয়া এবং বোতাম খুলে যাওয়ার নিদর্শন দেখে সিবিআই-এর তদন্তাকারীদের অনুমান, সঞ্জয় প্রবল শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করার জেরেই এমন অবস্থা হয় ওই তরুণীর।


from Bengali News, বাংলা নিউজ, বাংলায় সর্বশেষ খবর, Live Bengali News, Bangla News, Ajker Bengali Khabar - Eisamay https://ift.tt/qMgJ0uc
Previous article
Next article

Leave Comments

Post a Comment

ads

Articles Ads 1

ads

Advertisement Ads