জলকাদা ভর্তি রাস্তায় প্রশাসনকে হাঁটাল গ্রাম, মুচলেকা দিয়ে ছাড় https://ift.tt/07iEsOq - MAS News bengali

জলকাদা ভর্তি রাস্তায় প্রশাসনকে হাঁটাল গ্রাম, মুচলেকা দিয়ে ছাড় https://ift.tt/07iEsOq

এই সময়, বর্ধমান: কী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি ওঁরাও এসে একবার দেখে যান! গ্রামের এবড়োখেবড়ো জলমগ্ন রাস্তার হাল ফেরাতে এমনই জেদ ধরেছিলেন বাসিন্দারা। ওঁরা কারা? তালিকায় ব্লক ও মহকুমা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে পুলিশও।হাঁটুজলে ডুবে রয়েছে বর্ধমান-২ ব্লকের নবস্থা-১ পঞ্চায়েতের আউশা ও বেগুট গ্রামের রাস্তা। প্রতিবাদে ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা অবরোধ করে রেখেছেন ব্যস্ত কালনা-বর্ধমান রোড। পঞ্চায়েত অফিসে তালাবন্দি খোদ প্রধান। পরিস্থিতি সামলাতে এলাকায় গিয়ে বৃহস্পতিবার জনরোষের মুখে পড়লেন জয়েন্ট বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারা। বৃষ্টির মধ্যে ছাতা ছাড়াই তাঁদের জলভর্তি রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য করলেন নাছোড় গ্রামবাসীরা। এমনকী গ্রাম ছাড়ার আগে অনেকটা বাধ্য হয়েই তাঁরা মুচলেকা দিয়ে জানিয়ে গেলেন, আজ, শুক্রবার থেকেই শুরু হবে রাস্তার কাজ।এ দিনের ঘটনার পরে চোখ খুলেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের। শুধু নবস্থা-১ পঞ্চায়েতের ওই রাস্তাই নয়, জেলার সব বেহাল রাস্তার খোঁজ নিতে শুরু করেছেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) শুভলক্ষ্মী বসুর কথায়, 'খারাপ রাস্তার প্রতিবাদে জয়েন্ট বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির আধিকারিকদের জল-কাদার মধ্যে হাঁটানোর ঘটনা আমি শুনেছি। তাঁদের এলাকার বেহাল রাস্তাগুলোর একটি তালিকা তৈরি করতে আমরা প্রতিটি ব্লকের বিডিও-কে আজই নির্দেশ পাঠিয়েছি। ওই সব রাস্তা সারানোর এস্টিমেট পাঠাতে বলেছি। এই মুহূর্তে যতটা সম্ভব রাস্তা মেরামতের কথা সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে।' অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, 'নবস্থার রাস্তাটি তৈরির কাজ যাতে দ্রুততার সঙ্গে করা হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমরা বলব। গ্রামবাসীর সমস্যা লাঘব করতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।'রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেই রাস্তার অবস্থা বেশ খারাপ। কলকাতা ও সল্টলেকের কিছু রাস্তার ছবি ভয়াবহ। দেখতে দেখতে খানিকটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে নাগরিকদের। তা নিয়ে সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিবাদ হয় না বললেই চলে। তা হলে আচমকা বর্ধমানের প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারা কোথা থেকে পেলেন এই জোর? নেটিজ়েনদের অনেকেরই দাবি, সাম্প্রতিক আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের রুখে দাঁড়ানো দেখেছে গোটা বাংলা। সাধারণ মানুষের একত্রিত প্রতিবাদ যে কতটা শক্তিশালী হতে পারে, তা-ও দেখেছে মানুষ। প্রশ্ন উঠেছে, এই আবহ থেকেই কি উঠে আসছে এই ধরনের দলবদ্ধ প্রতিবাদ? যেখানে রাজনৈতিক কোনও দলের ছোঁয়াও লাগতে দেওয়া হচ্ছে না?আউশা ও বেগুট গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা যে রাস্তার উপর নির্ভরশীল, অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তার কোনও সংস্কারই হয়নি। বাসিন্দাদের দাবি, গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোট বয়কটের ডাক দিতে তখন প্রশাসন রাস্তা সারাইয়ের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা আদতে বাস্তবায়িত হয়নি। পঞ্চায়েত অফিস, বিডিও অফিসে একাধিক বার আবেদন জানানো হলেও লাভ হয়নি। বুধবার ওই রাস্তা ধরে স্কুলে যাওয়ার সময়ে পড়ে গিয়ে এক ছাত্রের মুখে গুরুতর আঘাত লাগে। এর পরই গ্রামবাসীদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। বেহাল রাস্তার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে কালনা-বর্ধমান রোড অবরোধ করেন। তৃণমূলের প্রধান গৌরহরি দাঁ-কে পঞ্চায়েত অফিসে বসিয়ে রেখে বাইরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। বিক্ষোভরত গ্রামবাসী রজনীকান্ত সাঁই বলেন, 'আমরা অনেক বার প্রশাসনের কাছে গিয়েছি। এ বার প্রশাসনকে আমাদের কাছে আসতে হবে। এই জল-কাদা ভর্তি রাস্তায় হেঁটে তাঁদের দেখতে হবে, কী বিভীষিকাময় জীবন কাটাই আমরা। আর কোনও প্রতিশ্রুতি শুনব না। কাজ শুরু করার পরেই উঠবে অবরোধ, খুলবে পঞ্চায়েতের তালা।' গ্রামবাসী সাধন ঘোষের কথায়, 'যে পঞ্চায়েত গ্রামের মানুষের কোনও কাজে লাগে না, তার অফিস খোলার কোনও দরকার নেই। ভোটের আগে গালভরা প্রতিশ্রুতি, আর ভোট পেরোলেই সব ভুলে যাওয়ার রাজনীতি এ বার বন্ধ করতে হবে।' মেমারি থানার পুলিশ, বিডিও অফিসের কর্মীরা এ দিন গ্রামবাসীদের বারবার বুঝিয়ে বলার পরেও অবরোধ তুলতে পারেননি। শেষে বাধ্য হয়ে বিকেল পৌনে ৪টে নাগাদ বর্ধমান-২ ব্লকের জয়েন্ট বিডিও শিল্পা ভকত, পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি দেবদীপ রায়, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ, নির্মাণ সহায়ক ও ইঞ্জিনিয়াররা এলাকায় আসেন। গাড়ি থেকে নামতেই তাঁদের গ্রামের রাস্তা হেঁটে ঘুরে দেখার প্রস্তাব দেন গ্রামবাসীরা। পঞ্চায়েত অফিসের তালা খুলে নিয়ে আসা হয় প্রধানকেও। এর পর মেমারি থানার এক পুলিশ আধিকারিককে সঙ্গে নিয়ে প্রশাসনিক কর্তারা জল-কাদায় ভরা রাস্তায় হেঁটে গ্রামে ঘোরেন। হাঁটতে হাঁটতে জয়েন্ট বিডিও বলেন, 'গ্রামবাসীদের ক্ষোভ খুবই সঙ্গত। আমরা তো নিজেরাই পরিস্থিতি দেখছি। ইঞ্জিনিয়াররাও দেখলেন।' পঞ্চায়েত প্রধানের বক্তব্য, 'পঞ্চায়েত থেকে ইতিমধ্যেই একটি কালভার্ট তৈরি করেছি। রাস্তার জন্য টেন্ডারও করেছি। কিন্তু নানা পরিস্থিতির জন্য কাজটা শুরু করা যায়নি।' এর পরই গ্রামবাসীদের কাছে পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি মুচলেকা দেন, শুক্রবার থেকে রাস্তা তৈরির কাজে হাত দেওয়া হবে। তিনি বলেন, 'এই রাস্তার কাজ পঞ্চায়েত সমিতি থেকে ইতিমধ্যেই ধরা হয়েছে। এসআরডিএ (স্টেট রুরাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি) কাজটা করবে। আশা করছি, আগামী সাত মাসের মধ্যে স্থায়ী রাস্তা তৈরি করে ফেলব আমরা। সরকারি কাজের টেন্ডারের জট কাটতে একটু সময় লাগছিল বলেই দেরি হয়েছে।'সরকারি মুচলেকা পাওয়ার পর এ দিন বিকেল প্রায় সাড়ে ৪টে নাগাদ অবরোধ ওঠে। যদিও বেগুট গ্রামের বাসিন্দা কল্যাণ হাজরা বলেন, 'যতক্ষণ না রাস্তা সারানোর কাজ শুরু হচ্ছে, ততক্ষণ এই প্রশাসনের কথায় আমরা বিশ্বাস রাখতে পারছি না। সব মিলিয়ে ২ কিমি রাস্তাও হবে না, সেটা সারাতেই এই অবস্থা!'


from Bengali News, বাংলা নিউজ, বাংলায় সর্বশেষ খবর, Live Bengali News, Bangla News, Ajker Bengali Khabar - Eisamay https://ift.tt/rK9BonC
Previous article
Next article

Leave Comments

Post a Comment

ads

Articles Ads 1

ads

Advertisement Ads