শহবাগে প্রতিবাদী সংখ্যালঘুরা, সীমান্তের গ্রাম জুড়ে শুধুই কান্না https://ift.tt/qnkZMcV - MAS News bengali

শহবাগে প্রতিবাদী সংখ্যালঘুরা, সীমান্তের গ্রাম জুড়ে শুধুই কান্না https://ift.tt/qnkZMcV

কুদ্দুস আফ্রাদ*ঢাকাপরপর দু’দিন। শুক্রবারের মতো এ দিনও প্রতিবাদ-আন্দোলনে সরগরম হয়ে রইল ঢাকার শাহবাগ চত্বর। হিন্দুদের উপর হামলা বন্ধের দাবিতে ফের উঠল স্লোগান— ‘আমার মাটি আমার মা, বাংলাদেশ ছাড়ব না,’ কিংবা ‘বাংলাদেশ কারও বাপের না’। সংখ্যালঘু-নির্যাতনে দোষীদের দ্রুত শাস্তি এবং অবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন-সহ আট দফা দাবিও উঠে এল অবস্থান বিক্ষোভ থেকে। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে তিন দিন সময়ও বেঁধে দিলেন বিক্ষুব্ধরা। কিন্তু এ যেন শুধুই রাজধানী ঢাকা সংলগ্ন শহুরে বাংলাদেশের ছবি। যেখানে রুখে দাঁড়াতে শুরু করেছেন অনেকে। প্রকাশ্যে বলছেন — ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতায় কি হিন্দুদের কোনও অবদান নেই? অত্যাচারও তাই আর সহ্য করব না। যারা মন্দির ভাঙতে আসবে, তাদের গুঁড়িয়ে দেব এবার।’ এই শাহবাগ চত্বর থেকেই অনেকে আবার পাল্টা মারের রাস্তায় না-গিয়ে চাইছেন রফা। বলছেন, ‘ক্ষমতায় যে-ই আসুক না কেন, আমরা নিরাপত্তা চাই। আজ থেকে যেন একটাও হিন্দু বাড়ি বা মন্দির পাহারা দিতে না হয়।’ সীমান্ত বরাবর প্রান্তিক বাংলাদেশের ছবিটা কিন্তু একেবারেই আলাদা। শেখ হাসিনা সরকারের পতন সপ্তাহ পেরোতে চলল, কিন্তু গ্রামীণ বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ মানুষের দিন এখনও কাটছে কান্না আর আতঙ্কে— কে জানে কখন কার বাড়িতে হামলা হয়!থাক পড়ে বাড়িঘর-দোকানপাট। প্রাণ বাঁচাতে লালমণিরহাট, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, ঠাকুরগাঁও-এর বাসিন্দারা সুযোগ পেলেই ছুটে গিয়েছেন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে। যদি কাঁটাতার ডিঙ্গিয়ে ‘ওপারে’ যাওয়া যায়! ও পারে আশ্রয় নিতে চেয়ে কেউ কেউ সাঁতরে নদী পার হওয়ার চেষ্টাও করেছেন। যাওয়া অবশ্য হয়নি। এই যেমন, লালমণিরহাটের অদিতমারি উপজেলার কমলবাড়ি ইউনিয়নের চন্দপাট বাবুপাড়া গ্রামের কালিকান্ত রায়। বছর পঁয়ষট্টির বৃদ্ধ চোখে-মুখে ভয় নিয়েই বললেন, ‘গত কয়েক দিন যে ভাবে দিন কাটাচ্ছি, মুক্তিযুদ্ধের সময়েও এতখানি আতঙ্ক ছিল না। গত সোমবার শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর চাউর হওয়া মাত্রই হাসিনা-বিরোধীরা লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে বিজয় মিছিল বের করে দেয়। আমাদের গ্রামের দিকে আসছে দেখে আতঙ্কে পালিয়ে যাই।’ পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন বছর ষাটেকের সুরেন্দ্রনাথ রায়ও। প্রাণে বেঁচেছেন। কিন্তু তাঁর চায়ের দোকানটা কারা যেন চুরমার করে দিয়ে গিয়েছে!কালীকান্ত রায়ের অতীত অভিজ্ঞতা যথেষ্ট তিক্ত। ২০০১-এ বিএনপি-জামায়েত গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসার পর-পরই তাঁর দোকানে হামলা হয়েছিল। তাই এবার, বিজয়মিছিল আসছে দেখেই বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বের অন্য গ্রামে আশ্রয় নেন তিনি সপরিবার। স্থানীয় প্রশাসনের আশ্বাসে সম্প্রতি বাড়ি ফিরলেও আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না। চন্দপাট বাবুপাড়া গ্রামেরই বাসিন্দা বছর বত্রিশের যুবক কৃষ্ণকান্তি রায় জানান, গত শুক্রবার গভীর রাতে তাঁর বাড়িতেও হানা দিয়েছিল একদল দুষ্কৃতী। আগেভাগে তা আঁচ করে কোনও ভাবে প্রাণে বেঁচেছেন তাঁরা। ২০০১-এ বিএনপি-জামায়েত ক্ষমতায় আসার সময়ে তাঁর বয়স ছিল সাত-আট বছর। এখনও স্পষ্ট মনে আছে— ওরা দোকানের সামনে আপত্তিকর জিনিস এসে ফেলে দিয়ে গিয়েছিল। ‘আবার সেই দুঃস্বপ্নের দিন,’ হতাশা চেপে রাখতে পারলেন না কৃষ্ণকান্তি। জানালেন, গত বুধবার সীমান্ত লাগোয়া গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ সীমান্ত পেরিয়ে ও পারে যেতে চেয়েছিল। বিএসএফ তাঁদের শুধু আশ্বস্ত করেছে— পরিস্থিতির কথা তারা ভারত সরকারকে জানাবে। কিন্তু এখনই তাঁদের আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।সিঁটিয়ে রয়েছে ওই গ্রামেরই বাসিন্দা তথা অদিতমারি উপজেলা যুবলিগ নেতা আয়েতুল ইসলামও। তাঁর অভিযোগ, গত ৪-৫ দিন ধরে অদিতমারি ও পাশের কালিগঞ্জ উপজেলার সখ্যালঘু সম্প্রদায় ও আওয়ামি লিগের নেতা-কর্মীদের বাড়ি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা করছে বিএনপি-জামায়েতের ক্যাডাররা। তারা নানারকম দেশি অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হানা দিচ্ছে। গত শুক্রবার কালিগঞ্জের মার্কেটেও হামলা ও ভাঙচুর চালায় একদল দুষ্কৃতী। বাধ্য হয়েই তাই জান-মাল বাঁচাতে দিন-রাত পালা করে পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয়রা। আয়েতুলের কথায়, ‘থানায় পুলিশ নেই বলেই বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বেপরোয়া দুষ্কৃতীরা।’ঠাকুরগাঁওয়ের পরিস্থিতিও একই রকম। সেখানকার বালিয়াডাঙা উপজেলার কয়েকশো মানুষ ছুটে গিয়েছিলেন সীমান্ত সংলগ্ন নদী পেরোতে। বিএসএফ বাধা দেওয়ায় তাঁরা ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। স্থানীয় আওয়ামি লিগ পাশে থাকার আশ্বাস দিলেও ভয়েই দিন কাটছে এলাকাবাসীর। অভিযোগ, গত ৫ অগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই হিন্দু তথা সংখ্যালঘুদের উপর মরণখাঁড়া নেমেছে বাংলাদেশে। বাড়িঘর, দোকানপাট লুটের পাশাপাশি হিন্দুদের ব্যাপক মারধর করা হচ্ছে বলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলতে শুরু করেছেন অনেকে। একাধিক মন্দিরেও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে। প্রাণের ভয়ে অনেকেই পালিয়ে যেতে চাইছেন ভারতে। হাজারখানেক বাংলাদেশিকে শুক্রবারই কোচবিহারের শীতলখুচি সীমান্তে ভিড় করতে দেখা গিয়েছিল। তবে সবাই পালাতে চাইছেন, তা নয়।শাহবাগ যেন সেই পালাতে না-চাওয়া জানকবুল লড়াইয়ের ছবিই তুলে ধরল। সংখ্যালঘুদের উপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল-সহ বেশ কয়েকটি শহরে প্রতিবাদ শোভাযাত্রা করছেন সংখ্যলঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা। শনিবার বিকেল ৩টের পর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধরা। দীর্ঘক্ষণ থমকে যায় যান চলাচল। বৃহস্পতিবার রাতে নিরাপত্তার দাবিতে ঢাকার শাঁখারি বাজারে বড় মিছিলে নামতে দেখা গিয়েছিল সংখ্যালঘু হিন্দুদের। চট্টগ্রাম মন্দিরে হামলা করতে এসে দুষ্কৃতীরা স্থানীয়দের হাতে মার খেয়েছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে। এ দিন শাহবাগ চত্বর থেকেও যেন সেই পাল্টা মারের একটা ঝাঁজ পাওয়া গেল। শাঁখারি বাজার থেকে আসা এক প্রৌঢ় বলে উঠলেন, ‘ভারতে পালাব কেন? এই দেশটা কি আমার নয়?’গত কয়েক দিনে বাংলাদেশের ৫২টি জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর ২০০-রও বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে— এই অভিযোগ জানিয়ে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দাবিতে শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি লেখেন ‘বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ’ এবং ‘বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ।’ এ দিন কার্যত সেই সুরেই অন্তর্বতী সরকারের কাছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের ব্যানারে নানাবিধ দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন সনাতনপন্থীরা। এগুলির মধ্যে দুর্গাপুজোয় ৫ দিন সরকারি ছুটি, সংস্কৃত ও পালি বোর্ডের আধুনিকীকরণ, সংখ্যালঘুদের জন্য ১০ শতাংশ সংসদীয় আসন বরাদ্দ এবং দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের দাবিও রয়েছে।শাহবাগ চত্বরে জমায়েত করা এক প্রবীণ বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নেওয়ার জন্য অনেকে বর্ডারে গিয়ে বসে আছেন৷ তাঁদেরকে সম্মানের সঙ্গে বাড়িতে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।’ জনতার মধ্যে থেকে দাবি উঠল— ‘হিন্দুদের মন্দিরের জন্যে বিশেষ বাজেট বরাদ্দ করতে হবে প্রত্যেক বছর। ধর্মীয় কারণে হিন্দুরা যাতে সামাজিক কিংবা চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।’


from Bengali News, বাংলা নিউজ, বাংলায় সর্বশেষ খবর, Live Bengali News, Bangla News, Ajker Bengali Khabar - Eisamay https://ift.tt/fojYcC6

Leave Comments

Post a Comment

ads

Articles Ads 1

ads

Advertisement Ads