পঞ্চায়েতের ট্রেন্ড ফিরবে লোকসভায়, আশা-অঙ্ক জোড়াফুলে https://ift.tt/Kjdt9qP - MAS News bengali

পঞ্চায়েতের ট্রেন্ড ফিরবে লোকসভায়, আশা-অঙ্ক জোড়াফুলে https://ift.tt/Kjdt9qP

এই সময়: মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ট্রেন্ড যা ছিল, বুধবার ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে বেশিরভাগ আসনের ফল ঘোষণার পর সেই চিত্রে বিশেষ বদল হলো না। এই ফলাফলের অঙ্কেই আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনেও রাজ্যে বিপুল সংখ্যক আসনে জয়ের ইঙ্গিত পাচ্ছে তৃণমূল। বিজেপি এবং বাম-কংগ্রেস-আইএসএফের মধ্যে বিরোধী ভোট আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত হয়ে যাওয়ায় ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে জোড়াফুল নিজেদের অতীতের রেকর্ড ভেঙে ফেলতে পারে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের পর্যবেক্ষণ। ১৯৯৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল গড়ার পর ২০১৪ সালে জোড়াফুল সর্বোচ্চ ৩৪টি লোকসভায় জয়ী হয়েছিল। এবার ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে বিজেপির শক্ত ঘাঁটিতেই গেরুয়া শিবিরকে উড়িয়ে দিয়ে সমস্ত জেলা পরিষদ দখল করেছে তৃণমূল। মুর্শিদাবাদ ও মালদায় কংগ্রেসও তৃণমূলের দাপটের সামনে দাঁড়াতে পারেনি। ২০১৯ সালেই বামেরা লোকসভায় এই রাজ্যে শূন্য হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দু'বছর আগের বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় চার শতাংশ জনসমর্থন বৃদ্ধি করে তৃণমূল একাই এবারের পঞ্চায়েতে ৫১ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে। অন্যদিকে, বিরোধী ভোটের ২৩ শতাংশ বিজেপির দখলে গিয়েছে। বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট পেয়েছে ২০ শতাংশের বেশি ভোট। বিরোধী ভোটের এই আড়াআড়ি বিভাজন অব্যাহত থাকলে ২০২৪ সালে বিজেপির পক্ষে ২০১৯ সালের সাফল্যে পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা প্রায় থাকছে না বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সেফোলজিস্টদের পর্যবেক্ষণ। যদিও পঞ্চায়েত নির্বাচনের সঙ্গে লোকসভা ভোটের ন্যারেটিভের কোনও মিল থাকেন না। দিল্লি কার দখলে থাকা উচিত, সেদিকে তাকিয়েই জনতা লোকসভা ভোটে তাঁদের অভিমত ব্যক্ত করেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী ফলাফলের ইতিহাস বলছে, সাধারণত পঞ্চায়েতে যে দলের বিপুল সাফল্য থাকে, সেই দলই লোকসভা ভোটে সাফল্য ধরে রাখতে পারে। একমাত্র ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এর ব্যতিক্রম হয়েছিল। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট যে কার্যত প্রহসনে পরিণত হয়েছিল, শাসক দলের অন্দরেই তা নিয়ে দ্বিমত বিশেষ ছিল না। যার খেসারত তৃণমূলকে দিতে হয়েছিল ২০১৯-এ ১৮টি আসন বিজেপির কাছে খুইয়ে। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েই এবার পঞ্চায়েত ভোট অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে চেয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই বিজেপির হাতে থাকা লোকসভা ও বিধানসভাগুলিতে জোড়াফুলের জয়জয়কার দেখেই তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, 'মানুষ শুধু উন্নয়নের পক্ষে ভোট দেয়নি, কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরোধিতা করে লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়েও ভোট দিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে এখনও কিছু সময় রয়েছে। তৃণমূল সরকার এই সময়ে আরও কাজ করবে। জেলা পরিষদে কুড়িতে কুড়ি হয়েছে, লোকসভায় তৃণমূল ৪২-এ ৪২ করে দেখাবে।' ২০১৯ সাল থেকে উত্তরবঙ্গের চা-বলয় গেরুয়া ব্রিগেডের শক্ত ঘাঁটির তকমা পেয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনেও পদ্মফুল সেখানে জোড়াফুলের থেকে এগিয়ে ছিল। এবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লা নিজের বুথেই পরাজিত হওয়ায় বিজেপি নেতৃত্ব চমকে গিয়েছে। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে তৃণমূলের হয়ে পঞ্চায়েত ভোটের দায়িত্বে থাকা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, 'চা-বলয়ে আমরা বোঝাতে পেরেছি, জন বার্লা, জয়ন্ত রায়, নিশীথ প্রামাণিক গত সাড়ে চার বছরে কোনও কাজ করেননি। সেখানে চা শ্রমিকদের বাড়ি দেওয়া থেকে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহু উন্নয়নের কাজ করেছেন। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের সাফল্য লোকসভা নির্বাচনেও বজায় থাকবে।' ২০১৯-এ জঙ্গলমহলে বিজেপি বড় সাফল্য পেয়েছিল। তবে এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেখানেও জোড়াফুল হারানো জমি পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের দায়িত্ব থাকা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, 'জঙ্গলমহলের মানুষ নিজেদের অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, বিনা পয়সায় চাল, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দিচ্ছেন। তাই যে মানুষ গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপিকে সমর্থন করেছেন তাঁরা এবার তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। লোকসভা নির্বাচনেও এই প্রবণতা বজায় থাকবে।' পঞ্চায়েত নির্বাচনের ট্রেন্ড অব্যাহত রেখে ২০২৪ সালে তৃণমূল রেকর্ড সাফল্য পাওয়ার আশায় থাকলেও জোড়াফুলের এই অঙ্ককে পুরোপুরি খারিজ করেছে বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, 'এটা কোনও ভোটই হয়নি। লুট হয়েছে। এই নির্বাচন অবৈধ। লোকসভা ভোটে মানুষ এর জবাব দেবে। যেমনটা ২০১৮-এর পরে ২০১৯-এ দেখা গিয়েছিল।' তৃণমূল অবশ্য তা মানতে নারাজ। কুণালের যুক্তি, 'মানুষ ভোট না দিলে এই বিপুল জয় কখনও শুধু ছাপ্পা মেরে হয় না।' বিরোধী ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাওয়া আদতে তৃণমূল বনাম বিজেপি-- এই বাইনারি ভেঙে পড়ার প্রমাণ বলে মনে করছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তাঁর কথায়, 'বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ মিলিয়ে প্রায় ২১ শতাংশ ভোট পেয়েছে। বিজেপি সেখানে মোটামুটি ২৩ শতাংশে নেমে গিয়েছে। এতদিন যে তৃণমূল বনাম বিজেপি বাইনারি চলছিল, তা ভেঙে গিয়েছে। জল না থাকলে তৃণমূলের ভোটও মোটেই ৩০-৩২ শতাংশের বেশি হয় না।' বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে ধস নামিয়ে বাম-কংগ্রেস জোট আরও শক্তি বাড়াবে বলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট মনে করলেও তা দিয়ে তৃণমূলের জয়যাত্রা ঠেকানো যাবে এমন কথা এখনও জোর দিয়ে বলার জায়গায় নেই সিপিএম। বরং বিরোধী ভোট এভাবে বিভক্ত হয়ে থাকলে তার ফায়দা যে জোড়াফুলের ঝুলিতেই যাবে, তা বুঝতে পারছেন বাম নেতৃত্ব।


from Bengali News, আজকের বাংলা খবর, পঞ্চায়েত ভোট রেজাল্ট, News in Bangla, Bengali News Live Today, বাংলা সংবাদ https://ift.tt/rKEod7F
Previous article
Next article

Leave Comments

Post a Comment

ads

Articles Ads 1

ads

Advertisement Ads