সোনাগাছি থেকে চেতলা, প্রত্যাখাত হতেই বেপরোয়া সঞ্জয় https://ift.tt/GvgcoZ8 - MAS News bengali

সোনাগাছি থেকে চেতলা, প্রত্যাখাত হতেই বেপরোয়া সঞ্জয় https://ift.tt/GvgcoZ8

নথি এবং সাক্ষ্য প্রমাণ খতিয়ে দেখে আরজি করে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত যে সঞ্জয় রায়-ই, সে বিষয়ে অনেকটা নিশ্চিত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। কিন্তু নৃশংস ওই ঘটনার পরে তা ধামাচাপা দেওয়ার কী কী চেষ্টা করা হয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে, সেদিকেই এখন মূল ফোকাস তদন্তকারীদের। এ বিষয়ে সঠিক দিশা পাওয়ার জন্য গত এক সপ্তাহ ধরে একশো ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে। এই পরিস্থিতিতে ‘প্লেস অফ অকারেন্স’-এ একাধিক লোকের উপস্থিতি সংক্রান্ত একটি ফুটেজ সোমবার সামনে আসার পরে নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ওই ছবিতে এমন বহু লোকের হদিশ পাওয়া গিয়েছে, যাঁদের সে সময়ে ঘটনাস্থলে থাকার-ই কথা নয়। আরজি করের ঘটনা নিয়ে প্রমাণ লোপাট করা হয়েছে বলে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ জানিয়েছে সিবিআই। তবে এদিন লিক হওয়া ওই ফুটেজ নিয়ে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে কলকাতা পুলিশও। ডিসি(সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় দাবি করেছেন, সমস্ত নিয়ম মেনে সেমিনার রুমে প্রমাণ সংরক্ষণ করা হয়েছিল। এ ধরনের ছবি সামনে এনে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সিবিআই সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত ধর্ষণ-খুনের তদন্তে যে তথ্য তাদের হাতে এসেছে, তাতে ঘটনার সঙ্গে সঞ্জয় রায়ের সরাসরি যুক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছে। দ্বিতীয় বা তৃতীয় কোনও ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত ছিলেন কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। ঘটনার রাত....সঞ্জয়ের বয়ানঘটনার পরে মূলত তিনটি প্রমাণের উপর ভিত্তি করে সঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। যার মধ্যে একটি ছিল সেমিনার রুমের বাইরে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ। যেখানে সঞ্জয়কে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। দ্বিতীয় প্রমাণ হিসেবে পুলিশের হাতে উঠে আসে অভিযুক্তর ব্যবহার করা ব্লুটুথ হেডফোন। সেই হেডফোনটি ‘পেয়ার’ করা ছিল সঞ্জয়ের মোবাইল ফোনের সঙ্গে। তৃতীয় আরও একটি বিষয় মিলে যায় কলকাতা পুলিশের চতুর্থ নম্বর ব্যাটেলিয়নে গিয়ে। তদন্তকারীরা দেখতে পান আগের দিন রাতে পরে থাকা পোশাক সকাল বেলায় ধুয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিষ্কার করার চেষ্টা হয়েছে জুতোও। পুলিশ কর্তাদের মতে ধারণা হয় যে, জামা-প্যান্ট কাচলেও জুতো ওভাবে সাধারণত কেউ ধুয়ে দেয় না। ওই জুতোতে হালকা রক্তের দাগও দেখা যায়।তদন্তকারীদের কাছে সেই রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে সঞ্জয় জানায়, রাত বারোটা পরে আরও এক সিভিক ভলান্টিয়ার সৌরভের সঙ্গে কলকাতা পুলিশ লেখা বাইকে চেপে সে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ের একটি জায়গায় গিয়ে মদ্যপান করে। এরপর দুজনে ‘রিলাক্স’ করার জন্য পৌঁছে যায় সোনাগাছিতে। কিন্তু সেখানে পুলিশ পরিচয় দিয়ে দরদাম করতে গেলে প্রবল ঝামেলা শুরু হয়। ওখানকার এক মাসি দুজনকে বলেন, ‘ওসব পুলিশ-টুলিশ বলে এখানে কোনও লাভ হবে না।’ কার্যত অপমানিত দুই সিভিক ভলান্টিয়ার সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। আচমকা একজন পরিচিত-র অপারেশনের কথা মনে হতেই সঞ্জয়ের ইচ্ছেয় দুজনে আরজি করে গিয়ে জানতে পারে সেদিন তাঁর অপারেশন হয়নি। বাইরে এসে ফের একদফা মদ্যপান করে তাদের পরবর্তী গন্তব্য হয় দক্ষিণ কলকাতার চেতলা এলাকার একটি যৌনপল্লিতে। পকেটে পয়সা থাকায় সৌরভ একজনের ঘরে ঢুকতে পারলেও বাইকে বসে থাকতে হয় সঞ্জয়কে। সেখানে মশার কামড় খেতে খেতে এক পুরোনো পরিচিত মহিলাকে ভিডিয়ো কল করে সে। পুলিশকে সে জানায়, প্রায় তিনবার কল করলেও অন্যপ্রান্তের মহিলা ‘দিদি’ ফোন কেটে দিচ্ছিলেন। যদিও সিবিআই সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই মহিলাকে ন্যুড ছবি পাঠাতে বলে সঞ্জয়। তিনি তা পাঠিয়েও দেন। যদিও পরের দিন তা নিজের সেট থেকে মুছে দেন ওই মহিলা। যে ছবি সঞ্জয়ের মোবাইল থেকে পরে উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। প্রায় দেড়ঘণ্টা পরে সৌরভ বাইরে এলে ফের একবার আরজি করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় অভিযুক্ত। হাসপাতালে পৌঁছনোর পরে আর অপেক্ষা না করে সৌরভ একটি অ্যাপ-ক্যাব বুক করে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। এদিকে, মদ্যপ সঞ্জয় বাইক স্ট্যান্ড করে প্রথমে ইমারজেন্সি তারপর দোতলায় পৌঁছে যায়। সেখানে বেশ কয়েকটি ঘরে ‘কাউকে’ খোঁজার চেষ্টা করে সরাসরি উঠে পড়ে তিন তলায়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গলায় হেডফোন ঝোলানো অবস্থায় সে এগিয়ে যাচ্ছে। এরপর প্রায় ৪৫ মিনিট পরে তাকে আবার বেরিয়ে যেতেও দেখা গিয়েছে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, বাইরে গিয়ে নিজের বাইকে স্টার্ট করে সঞ্জয় সোজা চলে যায় চতুর্থ ব্যাটেলিয়নে নিজের থাকার জায়গায়। অত্যধিক মদ খাওয়ার জেরে ঘুমিয়ে পড়ে সে। পরের দিন সকালে খুনের ঘটনা টিভিতে দেখানো শুরু হতেই দ্রুত উঠে নিজের আগের দিনের জামা-প্যান্ট এবং জুতো ধুয়ে ফেলে সে। যদিও তার কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে হাজির হয়ে যান কলকাতা পুলিশের অফিসারেরা। জেরায় সঞ্জয় জানায়, সেমিনার রুমে আধো অন্ধকার ছিল। একজন মহিলাকে সেখানে চাদর ঢাকা দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখে সে মুখ এবং গলা টিপে ধরে। ঘুমন্ত অবস্থায় থাকায় তিনি তেমন কোনও প্রতিরোধ করতে পারেননি। এরপর ধর্ষণ করতে শুরু করলে ফের জেগে ওঠেন তরুণী চিকিৎসক। এ বারে তাঁর মাথা ঠুকে দেওয়া হয়। তাতেই কার্যত মৃত্যু হয় তাঁর। তদন্তকারীদের ধারণা, সম্ভবত ধর্ষণ করার সময়ে বাধা দিতে গেলে নৃশংস অত্যাচার করা হয় তরুণীর উপর। বিতর্কের মূলে ঘটনাস্থলের ফুটেজআরজি করের ঘটনায় তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে সিবিআই সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিল, ‘বহু তথ্য প্রমাণ নষ্ট করা হয়েছে।’ রাজ্য সেই দাবির বিরোধিতা করে। এরই মধ্যে সোমবার ঘটনার পরের দিন সেমিনার রুমের একটি ভিডিয়ো ফুটেজ প্রকাশ্যে আসে। যা ঘিরে নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে আইনজীবী শান্তনু দে ছাড়াও সেখানে ফরেন্সিক বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক দেবাশিস সোম রয়েছেন। শুধু তাই নয়, ঘটনাস্থলে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন সেখানে রয়েছেন, যাঁদের সেখানে থাকার কথা নয়। প্রশ্ন ওঠেছে, ফরেন্সিক পরীক্ষার আগে এত লোক ওখানে কী করছিলেন? কারণ, সকাল সাড়ে ন’টায় পিজিটি সৌমিত্র রায় প্রথম বিষয়টি জানতে পারেন। তারপর খবর যায় ইউনিট হেড সুমিত রায় তলাপাত্রের কাছে। তিনি পৌনে দশটা নাগাদ এমএসভিপিকে বিষয়টি জানান। তাঁর কাছ থেকে খবর পান অধ্যক্ষ। এরপর স্থানীয় পুলিশ ঘটনাটি জানতে পারে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, উপস্থিত পুলিশ কর্তা এবং চিকিৎসকরা জানতেন ওই ঘরে অত লোক থাকলে প্রমাণ নষ্ট হতে পারে। তারপরেও কেন ঘটনাস্থলে ভিড় সরানো হয়নি?যদিও কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার(সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘তরুণী চিকিৎসকের দেহ যেখানে ছিল, সেই জায়গাটি ঘিরে দেওয়া হয়েছিল। ফলে, বাইরের কারও পক্ষে ওই জায়গায় প্রবেশ করা সম্ভব ছিল না। সেমিনার হলটির দৈর্ঘ ৫১ ফুট। চওড়ায় ৩২ ফুট। দেহ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গেই সেমিনার হলের ৪০ ফুট অংশ ঘিরে দেওয়া হয়। বাকি অংশ, অর্থাৎ ১১ ফুট জায়গায় কয়েক জন দাঁড়িয়েছিলেন। যে ভিডিয়োটি সামনে এসেছে তা ওই জায়গার।’ঘটনাস্থলে আইনজীবীর উপস্থিতি প্রসঙ্গে ইন্দিরার বক্তব্য, ‘এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাতে পারবেন। যিনিই থাকুন না কেন, হাসপাতালের অনুমতি নিয়ে সেখানে ছিলেন।’


from Bengali News, বাংলা নিউজ, বাংলায় সর্বশেষ খবর, Live Bengali News, Bangla News, Ajker Bengali Khabar - Eisamay https://ift.tt/yRhYaFQ
Previous article
Next article

Leave Comments

Post a Comment

ads

Articles Ads 1

ads

Advertisement Ads