মেয়েকে হারিয়ে দেবীকে পেলেন হাড়িরাম, কেঁউদি কালীর অপার মহিমা https://ift.tt/o3NTcUX - MAS News bengali

মেয়েকে হারিয়ে দেবীকে পেলেন হাড়িরাম, কেঁউদি কালীর অপার মহিমা https://ift.tt/o3NTcUX

ঝাড়গ্রামের কেঁউদি গ্রামের দেবী যোগমায়া। চতুর্ভুজা উত্তরেশ্বর কালী। দেবীর উপরের ডান হাতে খড়্গ। নিচের ডান হাতে বরাভয়। উপরের বাম হাত মুষ্টিবদ্ধ। নিচের বাম হাতে মনোবাঞ্ছার অভীষ্ট পাত্র। ৭৪ বছর ধরে দাস পরিবারের মন্দিরে পূজিতা দেবী যোগমায়া অবশ্য কেঁউদি কালী নামে বেশি পরিচিত। ঝাড়গ্রাম গ্রামীণ ব্লকের রাধানগর অঞ্চলের সেবায়তন এলাকা লাগোয় ছোট্ট গ্রাম কেঁউদি। সেই গ্রামেই তালগাছের সারি দেওয়া পুকুর পাড় লাগোয়া সরু মাটির পথ পেরিয়ে কিছুটা গেলেই দেবীর মন্দির। পুজোর ইতিহাসজনশ্রুতি, কেঁউদি গ্রামের হাড়িরাম দাস তন্ত্রসিদ্ধ হয়ে স্বপ্নাদেশে দেবীকে কন্যারূপে পেয়েছিলেন। সে এক কাহিনী। সময়টা চল্লিশের দশক। হাড়িরামের ঘর আলো করে এসেছিল ফুটফুটে এক মেয়ে। কিন্তু মাত্র দেড় বছরে অসুস্থ হয়ে রক্তবমি করে মৃত্যু হয় সেই শিশুকন্যার। মেয়েকে হারিয়ে উন্মাদের মতো হয়ে যান হাড়িরাম। গ্রামের অদূরে শ্মশানের মাটি চাপা দিয়ে সমাহিত করেন মেয়েকে। কিন্তু সন্তানহারা বাবার মন। রাত হলেই শ্মশানে গিয়ে মাটি সরিয়ে মেয়ের দেহ বুকে চেপে কান্নায় ভেঙে পড়তেন তিনি। ভোরের আলো ফোটার আগে ফের মেয়ের দেহ মাটিচাপা দিয়ে আসতেন। এভাবে চলতে থাকে চারদিন। পঞ্চম দিনে শ্মশানে দেবী যোগমায়ার দর্শন পেলেন হাড়িরাম। দেবী জানালেন, এভাবে মাটি সরিয়ে রোজ মেয়ের দেহ দেখতে আসার দরকার নেই। তিনিই কন্যারূপে হাড়িরামের বাড়িতে থাকবেন আজীবন, সেবা নেবেন। হাড়িরাম হলেন বাকসিদ্ধএদিকে হাড়িরাম অব্রাহ্মণ, বৈষ্ণব। কিন্তু দেবীর আদেশে বাড়ির উঠোনে বেলগাছের তলায় পঞ্চমুণ্ডির আসনে সাধনা শুরু করলেন হাড়িরাম। সঙ্গী হিসেবে পেলেন বহিরাগত ৩ তান্ত্রিককে। এক অমানিশায় সিদ্ধিলাভ হল। লোকশ্রুতি, দেবী দর্শন দিয়ে জানালেন, হাড়িরাম হবেন বাকসিদ্ধ, অর্থাৎ যা বলবেন সেটাই ফলবে। হাড়িরামের বাড়ির উঠোনে পঞ্চমুণ্ডির আসনের পাশে জগতের মঙ্গলময়ী হিসেবে উত্তর দিকে পিঠ করে থাকবেন দেবী। ঘটনাচক্রে সেই রাতেই রাধানগরের এক মৃৎশিল্পী স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে গড়লেন প্রমাণ মাপের দেবী মূর্তি। মায়ের আদেশে মূর্তির দু'টি ডান হাতে খড়্গ ও বরাভয়। আজও সংরক্ষিত জটাএরপরই ১৯৪৯ সালের (১৩৫৬ বঙ্গাব্দ) এক অমাবস্যায় মাটির দেওয়াল ও খড়ের চালাঘরে যোগমায়াকে প্রতিষ্ঠা করেন হাড়িরাম। ‘হরি কৃষ্ণ হরি রাম, কালী কৃষ্ণ রাম রাম’ মন্ত্রে দেবীর পুজো করতেন হাড়িরাম। ক্রমে দেবীর মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে। ভক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকল। তৈরি হল দেবীর সুদৃশ্য মন্দির। হাড়িরামের সঙ্গে দেবীর সেবা করতে শুরু করলেন তাঁর স্ত্রী মনোরমাও। ক্রমে হাড়িরামের মাথায় প্রকাণ্ড জটা তৈরি হয়। মৃত্যুর আগে তিনি সেই জটা কেটে মন্দিরে রেখে দেন, যা আজও দেবীমূর্তির পাশে একটি কাঁচ ঘেরা কাঠের বাক্সে রাখা আছে। কালীপুজোয় বিপুল ভিড়বর্তমানে মন্দিরের সেবাইতের দায়িত্বে রয়েছেন হাড়িরামের ছেলে শিশির দাস। বছর আটষট্টির শিশিরবাবু জানালেন, বাবার মৃত্যুর পর তিনিই রোজ দেবীর নিত্যসেবা করছেন। এখনও দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন। হাড়িরামের মৃত্যুর পর মন্দিরের পাশেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। পরে তাঁর স্ত্রী মনোরমার মৃত্যু হলে তাঁকেও হাড়িরামের সমাধির পাশেই সমাধিস্থ করা হয়। ভক্তদের দানে সেখানে তৈরি হয়েছে সমাধি মন্দির। এক ভক্তের দানে মায়ের সেবক হাড়িরামের ধ্যানরত মূর্তি তৈরি হয়েছে। মন্দিরে মায়ের বিগ্রহের পাশেই রয়েছে হাড়িরামের মূর্তিও। দেবীর পুরনো মাটির মূর্তি প্রতিবছর নবকলেবর তৈরি করা হয়। কালীপুজোর রাতে প্রচুর ভক্ত আসেন। রাত দু'টোর আমানিশায় পুজো হয়। শিশিরবাবুর কথায়, 'মা আমাদের ঘরের মেয়ে। ভক্তিভরে মায়ের কাছে প্রার্থনা জানালে, মা ভক্তের কথা শোনেন। সেই বিশ্বাসেই বহু মানুষ আসেন।'


from Bangla News, বাংলা খবর, Bengali News, বাংলা সংবাদ, Bengali Breaking News, Latest Bengali News, বাংলা নিউজ https://ift.tt/uVm0Cfi
Previous article
Next article

Leave Comments

Post a Comment

ads

Articles Ads 1

ads

Advertisement Ads