ভাণ্ডার ভরে আস্থা জানাল গ্রামবাংলা https://ift.tt/onYeVQk - MAS News bengali

ভাণ্ডার ভরে আস্থা জানাল গ্রামবাংলা https://ift.tt/onYeVQk

প্রসেনজিৎ বেরা গ্রামবাংলা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই থাকল। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের নবজোয়ারের সামনে কার্যত ভেসে গেল বিরোধী শিবির। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরে রেজাল্টের যে ট্রেন্ড পাওয়া গিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের প্রতি গ্রামবাংলার মানুষ যেমন অটুট আস্থা দেখিয়েছে, তেমনই ভোটের আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যে নিবিড় জনসংযোগ যাত্রা চালানো হয়েছিল, জোড়াফুলের জয়যাত্রায় তা-ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। গণনাপর্ব মঙ্গলবার রাতেও শেষ হয়নি। আজ, বুধবার পঞ্চায়েত ভোটের সামগ্রিক ফল এলে তাতে বড় ধরনের কোনও ফারাক হওয়ার সম্ভাবনা কম। সরকারিভাবে ঘোষণা না-হলেও রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূল প্রায় ৫২ শতাংশ ভোট পেয়েছে। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রায় ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। সেই নিরিখে দু'বছর পরে গ্রামাঞ্চলে তৃণমূলের ভোট শতাংশ একধাক্কায় প্রায় চার শতাংশ বেড়েছে। প্রাপ্ত ভোটের হার বুঝিয়ে দিচ্ছে, গত দু'বছরে কয়লা, গোরু পাচার অথবা স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির মতো একাধিক ইস্যুতে বিরোধীরা সরব হলেও এবং শাসক দলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী জেলে গেলেও গ্রামবাংলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনমুখী প্রকল্প ও উন্নয়নের বার্তার উপরই ভরসা রেখেছেন। রাত পর্যন্ত পাওয়া ফল অনুযায়ী, প্রধান বিরোধী দল বিজেপি গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে সাড়ে চার হাজারের মতো আসনে জয়ী হয়েছে, বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট আড়াই হাজারের বেশি আসনে জয়লাভ করেছে। কিন্তু তৃণমূলের জয়ের ব্যাপকতার পাশে বিরোধীদের এই জয়ের হার অতি নগণ্য। শাসক দলের সঙ্গে টক্কর দেওয়া তো দূরের কথা, বহু যোজন দূরে থেমে গিয়েছে বিরোধী শিবির। রাত পর্যন্ত ঘোষিত ফল অনুযায়ী, বিজেপি প্রায় ২৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের তুলনায় একধাক্কায় ১৫ শতাংশ ভোট কমেছে গেরুয়া শিবিরের। বামেরা প্রায় ১৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় বামেদের প্রাপ্ত ভোট দ্বিগুণ হলেও তা অঙ্কের বিচারে অনেকটাই কম। প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত ভোটের অঙ্ক বলছে, বিরোধী বিজেপির যে ভোট কমেছে, তা কিন্তু সবটা বামেদের ঘরে যায়নি। কংগ্রেস প্রায় পাঁচ শতাংশ ভোট পেয়েছে। নওশাদ সিদ্দিকির আইএসএফের ভোট শতাংশ এদিন আলাদা করে পাওয়া যায়নি। কারণ, তা সার্বিকভাবে নির্দলের ভোট শতাংশের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যদিও আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের হিসাব বলছে, বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ সব মিলিয়ে প্রায় ২০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাজ্যের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে গ্রাম পঞ্চায়েতে ৬৩২২৯টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলে গিয়েছে মোট ১৮৬০৬টি আসন। পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে ৯৭৩০টি আসনের মধ্যে ১১৮টি আসন এবং জেলা পরিষদে ৯২৮টি আসনের মধ্যে জোড়াফুল জয়লাভ করেছে ১৮টি আসনে। গভীর রাত পর্যন্ত যে ট্রেন্ড এসেছে, সেখানে সব জেলা পরিষদের বোর্ড শাসক দলের হাতেই থাকার সম্ভাবনা প্রবল। গ্রামবাংলায় জোড়াফুলের এই বিপুল সাফল্য দেখে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেছেন, 'বিজেপি ও বাম-কংগ্রেস-সহ সমগ্র বিরোধীপক্ষকে মানুষ সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছে। বিরোধীদের 'নো-ভোট টু মমতা' স্লোগানকে মানুষ 'নাও ভোট ফর মমতা' স্লোগানে বদলে দিয়েছে। তৃণমূলের নবজোয়ার যাত্রায় জনতার যে দৃঢ় সমর্থন এসেছিল, তখনই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম এই সাফল্য আসতে চলেছে।' পঞ্চায়েতে নির্বাচনের এই সাফল্য আগামী লোকসভা নির্বাচনেও অক্ষুণ্ণ থাকবে বলে মনে করছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। উত্তরবঙ্গের চা-বলয় থেকে জঙ্গলমহল, মতুয়া প্রভাবিত জেলা থেকে সংখ্যালঘু এলাকা---সর্বত্রই তৃণমূলের জয়যাত্রা অব্যাহত থেকেছে। দু'বছর আগে যে বিধানসভাগুলিতে পদ্মফুল ফুটেছিল, পঞ্চায়েতে সেখানেও জোড়াফুল ফুটেছে। এমনকী, শুভেন্দু অধিকারীর খাসতালুক নন্দীগ্রামেও তৃণমূল জোরদার লড়াই করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড, কন্যাশ্রী থেকে দুয়ারে রেশনে বিনা পয়সার চাল---একের পর এক জনমুখী প্রকল্পের যে সুবিধা গ্রামীণ জনতা পাচ্ছে, তার ফলেই গ্রামবাংলা তৃণমূলের দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত হয়েছে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের পর্যবেক্ষণ। তৃণমূলের ডেপুটি চিফ হুইপ তাপস রায়ের কথায়, 'গ্রামবাংলায় উন্নয়নে এবং অর্থনীতি চাঙ্গা করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে প্রকল্পগুলি নিয়েছেন, স্বাধীনতার পর কোনও সরকার তা করেনি। মানুষের কাছে উন্নয়নের সুবিধা পৌঁছে গিয়েছে। তাই মানুষ মমতাকেই ভোট দেবে। নির্বাচন এলে তখনই শুধু বিজেপি-সহ বিরোধীদের দেখা যায়। মানুষ কেন তাঁদের ভোট দেবে?' গত এক বছর ধরে নিয়োগ দুর্নীতি, কয়লা-গোরু পাচার কেলেঙ্কারি নিয়ে বিরোধী শিবির অভিষেক সহ শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার করলেও মানুষ সেই প্রচারে কোনও কান দেয়নি বলেই তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য। দলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনের কথায়, 'গোপন ব্যালটে মানুষের মতামত নিয়ে প্রার্থী বাছাই করা হয়েছিল। অভিষেকের জনসংযোগ যাত্রায় এভাবে প্রার্থী বাছাইয়ের ফল হাতেনাতে পাওয়া গেল। নবজোয়ার যাত্রায় কেন্দ্রের বঞ্চনার কথা, টাকা আটকে দেওয়ার কথা তুলে ধরেছিলেন অভিষেক। তাই ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে কিংবা ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে মানুষ বিজেপিকে সমর্থন করেছিল, সেখানকার মানুষ তাঁদের ভুল বুঝে ফের তৃণমূলের পাশে ফিরে এসেছে।' যদিও তৃণমূলের এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ গেরুয়া শিবির। সিপিএম ভোট কেটে বহু জেলায় তৃণমূলের জয়ের পথ প্রশস্ত করেছে বলে সুকান্ত মজুমদারের দাবি। বিজেপির রাজ্য সভাপতির কথায়, 'সিপিএম সাত-আট শতাংশ ভোট পেয়ে ভোট কাটুয়া হয়ে তৃণমূলকে বহু জায়গায় জিততে সাহায্য করেছে।' প্রকাশ্যে না বললেও জঙ্গলমহলে কুড়মি ভোট বিভাজিত হওয়ার ফলে বিজেপি ২০১৯ ও ২০২১ সালের সাফল্য ধরে রাখতে পারেনি বলে গেরুয়া শিবিরের একাংশের বক্তব্য। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে রাজ্যে বিজেপির উত্থান হয়েছিল। ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় সেই পঞ্চায়েত ভোটেই গেরুয়া শিবিরের ডাউনওয়ার্ড ট্রেন্ড নগ্ন ভাবে প্রকাশ্যে চলে এল। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায়, 'বিজেপি যে ফেক অপোজিশন, তা মানুষ বুঝে গিয়েছে। তৃণমূলও জানত, তারা হারতে চলেছে। তাই পুলিশ দিয়ে কাউন্টিং এজেন্টদের আটকে রাখা থেকে জয়ী বাম প্রার্থীদের সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়নি। কিন্তু মানুষ যে তৃণমূল-বিজেপির উপরে ক্ষুব্ধ তা প্রমাণিত হয়েছে।' পঞ্চায়েতের বিপুল সাফল্যকে হাতিয়ার করে অভিষেক লোকসভা নির্বাচনে ফের সবুজ ঝড়ের প্রত্যাশা যেমন করছেন, তেমনই সেলিমও বাম-কংগ্রেস-আইএসএফের লড়াই আগামী দিনে আরও জোরদার হবে বলে মনে করছেন। যদিও বিরোধী শিবিরের ভোট বিভাজন আখেরে শাসক দলকেই আরও সাহায্য করবে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের পর্যবেক্ষণ।


from Bengali News, আজকের বাংলা খবর, পঞ্চায়েত ভোট রেজাল্ট, News in Bangla, Bengali News Live Today, বাংলা সংবাদ https://ift.tt/nxdi3HC
Previous article
Next article

Leave Comments

Post a Comment

ads

Articles Ads 1

ads

Advertisement Ads