সিবিআইয়ের 'চাপ' তত্ত্বে শাহ-অভিষেক এক https://ift.tt/s6UkzwR - MAS News bengali

সিবিআইয়ের 'চাপ' তত্ত্বে শাহ-অভিষেক এক https://ift.tt/s6UkzwR

প্রশান্ত ভট্টাচার্য অদ্ভুতভাবে দুই যুযুধান শিবিরের দুই সেকেন্ড ইন কমান্ড একসুরে কথা বললেন! এ কী নিখাদ সমাপতন, নাকি নন-লিনিয়র ডিসকোর্স? বুধবার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ও অমিত শাহর মুখে মূলত একই প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। দু’জনেই অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে ‘অপব্যবহার’ নিয়ে। ফারাক শুধু সময়কালের আর রঙের। টার্গেট ভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় থাকা দুই কেন্দ্রীয় সরকার। গত বুধবার বিকেলে শহিদ মিনার ময়দানে তৃৃণমূল ছাত্র-যুবর এক সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে CBI-র বিরুদ্ধে 'চাপ' দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক। তিনি জানান, দলের দুই নেতা মদন মিত্র এবং কুণাল ঘোষ যখন জেলে ছিলেন, তখন তাঁদের ওপরে ‘চাপ’ সৃষ্টি করা হয়েছিল যাতে তাঁরা অভিষেকের নাম বলেন। অভিষেকের নিজের ভাষ্য, "মদনদা জেলে ছিলেন। কুণাল ঘোষও জেলে ছিলেন। এঁদের বলা হয়েছিল, আমার নাম নিলেই ছেড়ে দেওয়া হবে।" এদিন সন্ধের পরে এক সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, আধিকারিকরা গুজরাতের একটি ভুয়ো এনকাউন্টারের ঘটনায় নরেন্দ্র মোদীর নাম বলার জন্য তাঁকে ‘চাপ’ দিয়েছিলেন। শাহ ভাষ্য, "আমি যখন গুজরাতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলাম তখন আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা সোহরাবুদ্দিন ফেক এনকাউন্টার মামলায় আমাকে জড়ানো হয়েছিল। সেই মামলায় তদন্তর ভার ছিল CBI-র ওপর। সেই সময় দিনের পর দিন মোদীজিকে ফাঁসানোর জন্য সিবিআই আমার ওপর চাপ দিয়েছিল।" CBI আধিকারিকরা বলতেন, "আপনি শুধু মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নামে অভিযোগ আনুন, আমরা আপনাকে ছেড়ে দেব।" কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, তখন কেন্দ্রে ছিল মনমোহন সিং নেতৃত্বাধীন UPA সরকার। অর্থাৎ সরকারের রঙ বদলে ব্যাপারটার কিছু পরিবর্তন হয়নি, মেনে নিচ্ছেন অমিত শাহ। সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিলেন সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব। দলের জাতীয় অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে কংগ্রেসও ব্যবহার করেছে। কংগ্রেসও শেষ হয়েছে, BJPও শেষ হবে। সেই দিক থেকে দেখলে প্রায় সব বিরোধী দল মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তদন্তকারী সংস্থার অপব্যবহারের অভিযোগ আনছে। এবং, এই ব্যাপারে ১৪টি বিরোধী দল সম্মিলিতভাবে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। ঠিক এই সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর CBI নিয়ে এই 'চাপ'এর কথা কি বিরোধীদের বক্তব্যকেই মান্যতা দিচ্ছে না? যদিও শাহ দাবি করেছেন, তাঁদের সরকার সিবিআইকে 'অপব্যবহার' করছে না, করেও না। উলটো তাঁর দাবি, "আমরা কখনই কোনও কিছুর জন্য কাউকে দোষারোপ করিনি। কংগ্রেস সরকারের সময় নিরপরাধ পুলিশ অফিসারদের কারাগারে রাখা হয়েছিল।" এরপরেই তাঁর পরিপ্রশ্ন, "বিরোধীরা অভিযোগ আনছে বলে আমরা কি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই বন্ধ করে দেব? অভিযুক্ত যদি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হন, তা হলে কি আমাদের কাজ করা উচিত নয়?" শাহ আরও স্মরণ করিয়ে দেন, যে যখন তাঁর বিরুদ্ধে ভুয়ো সংঘর্ষ মামলা চলছিল, তখন তাঁরা কোনও রাজনৈতিক পদক্ষেপ করেননি। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "আমরা তখন ইচ্ছে করলে সংসদ অচল করে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারতাম। আমরা তা করিনি। আমরা এখনও মনে করি, কেন্দ্রীয় সংস্থা তাদের নিজেদের মতো করে কাজ করবে। ওই তদন্তের কাজে নাক গলিয়ে কোনোরকম বাধা সৃষ্টি করার নীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না।" অমিত শাহর এই বিশ্বাস জারির পরের দিনই অর্থাৎ বৃহস্পতিবার শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত প্রেসিডেন্সি জেল থেকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। কুন্তলকে লক আপে নিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কুন্তলও বলেন, এজেন্সি জোর করে বলপূর্বক তাঁদের দিয়ে নেতাদের নাম বলানোর চেষ্টা করছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একইসঙ্গে বলছেন সিবিআই এমন 'চাপ' প্রয়োগ করে থাকে, আবার বলছেন, ওটা তাঁরা করেন না। তার মানে এই 'চাপ'এর তদন্ত CBI-র ডিজাইন বা আর্ট অফ ওয়ার্ক। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, CBI-ED-র 'অপব্যবহার' নিয়ে বিরোধীদের এই মুভমেন্ট BJP-কে একটু চাপে রেখেছে, তাই অমিত শাহ নেমে পড়েছেন নিজের রেফারেন্স ফ্রেম দিয়ে CBI-র কাজের ঢং বোঝাতে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই দাবি নিয়ে নতুন চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসের দাবি, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মোদী জমানায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা যে মাত্রায় অপব্যবহার হয়েছে তা ইতিহাসে লেখা থাকবে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়ানক যে নেতারা বিরোধীদের এজেন্সি লেলিয়ে দেওয়ার ভয় দেখাতে শুরু করেছেন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে BJP নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি নাকি বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মন্ত্রীকে হুমকি দিয়ে বলছেন, এজেন্সিকে দিয়ে গ্রেফতার করিয়ে দেবেন। পাশাপাশি, বক্তব্য, CBI-কে কীভাবে অপব্যবহার করা হয় তা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই স্পষ্ট জানাচ্ছেন নিজের রেফারেন্স দিয়ে। এর পর এই তদন্তকারী সংস্থার তদন্তের আর কি গ্রহণযোগ্যতা থাকবে? CBI এখনও যে এই ধরনের কৌশল নিচ্ছে না তার গ্যারান্টি কী আছে? এখানে মনে রাখা উচিত, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী মেয়ে কে কবিতা মন্তব্য করেছিলেন, "আগে আসে ইডি, পরে মোদী"। তবে, এটাও ঠিক, যত ঘটা করে CBI বা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা একেকটা তদন্ত হাতে নেয়, তত ঘটা করে কিন্তু কোনও ফল দেয় না। বছরের পর বছর তদন্ত চলতেই থাকে। এই অভিজ্ঞতার আবহে অমিত শাহ যেভাবে সিবিআইয়ের 'চাপ' তত্ত্ব সামনে আনলেন, তাতে সিবিআই বা অন্যান্যদের গৌরব কমল বইকি বাড়ল না!


from Bengali News, বাংলা খবর, Bangla News, Ajker Khobor, Latest Bengali News - Ei Samay https://ift.tt/8qLBcti
Previous article
Next article

Leave Comments

Post a Comment

ads

Articles Ads 1

ads

Advertisement Ads