রাহুলকে নিয়ে মোদীদের এত তাড়া কেন? https://ift.tt/gSvVdxk - MAS News bengali

রাহুলকে নিয়ে মোদীদের এত তাড়া কেন? https://ift.tt/gSvVdxk

প্রশান্ত ভট্টাচার্য সত্যকথা শুধু অপ্রিয়ই হয় না, আত্মঘাতীও হয়। হাড়ে হাড়ে বুঝছেন রাহুল গান্ধী। দেশের জন্য বলিদান দেওয়া পরিবারের এই রাজনীতিবিদ বুঝতে পারেননি, লোকসভার নিরপেক্ষ চেয়ারটিও আসলে রঙিন। আর ওই রঙিন দলটির এক এবং একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে কংগ্রেসমুক্ত ভারত। কেন না, যতদিন থাকবে ততদিন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে এই দলটির মেন্টরদের বিশ্বাসঘাতক মুখগুলো জ্বল জ্বল করবে। কোনও ধামায় তা চাপা দেওয়া যাবে না। ফলে রাহুল গান্ধীকে নিয়ে লোকসভার সচিবালয়ের বড় তাড়া ছিল। তাই শুক্রবার সকাল হতে না হতেই কোতল করা হল সাংসদ রাহুলকে। লোকসভার সচিবালয় কোনও বেআইনি কিছু করেনি। আইনানুযায়ী, কোনো আদালত দুই বছর বা তার বেশিদিনের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলে সাংসদ-বিধায়কের পদ খরিজ হয়ে যায়। সেই জনপ্রতিনিধি আইন অনুসারেই রাহুল তাঁর সাংসদপদ হারালেন। এভরিথিং ইজ ফেয়ার। কেন না, বৃহস্পতিবার সুরাটের এক নিম্ন আদালত রাহুলকে দুই বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে। এখানেও আমরা দেখলাম নিম্ন আদালতের যেন বড় বেশি তাড়া, রাহুলকে দোষী সাব্যস্ত করায়। আর এরপরেই আমরা দেখলাম লোকসভার সচিবালয়ের আরও বেশি তাড়া রাহুলের সংসদপদ খারিজে। মোদীর শাসনে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর অ্যাক্টিভিটি যদি সামগ্রিক দৃষ্টি দিয়ে দেখি তবে আমরা আরও একটি ভারতীয় সংস্থার তাড়াহুড়ো দেখতে পাব। সেটি জাতীয় নির্বাচন কমিশন। ওরা খুব শিগগিরই ওয়েনাড লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন ঘোষণা করবে। যদি না করে আমার চেয়ে অবাক কেউ হবে না। রাহুল সেখানেও এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। ভারতীয় গণতান্ত্রিক কাঠামো যত বেশি করে একদলীয় শাসনের দিকে এগোচ্ছে, তত বেশি করে স্বৈরাচারী দাঁতনখ বেরিয়ে পড়ছে। আমরা কয়েকদিন আগেই দেখলাম অমিত শাহর পুলিশ সাতসকালেই ১২ তুঘলক রোডে রাহুল গান্ধীর বাসভবনে চড়াও হল। তেমন সুবিধা করতে পারলে, গ্রেফতারও করত। আসলে আদানি কেলেঙ্কারির পরে সংসদের বাজেট অধিবেশনে রাহুল যেভাবে মোদীকে বিঁধেছিলেন, তার এক তৃতীয়াংশ লোকসভার রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ ওম বিড়লা দিলেও রাহুলকে বাঁধতে পারা যাচ্ছে না। মোদীকে বার বার জবাবদিহির জন্য জিগির দিচ্ছেন। সংসদের ভিতরে ও বাইরে, দেশের ভিতরে ও বাইরে ভারতের কণ্ঠের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।আর এখানেই ঘোর আপত্তি মোদী-শাহদের। সফল ভারত জোড়ো যাত্রায় যে মাইলেজ পেয়েছেন রাহুল, তাতে তাঁকে আর 'পাপ্পু' বলা যাচ্ছে না, আদানি ইস্যুতে বেইজ্জত হওয়া ভারত সরকারকে রাহুল যেভাবে বিঁধছেন, আর বিরোধীদের জড়ো করছেন, তাতে তাঁর ডানা ছাঁটাটা জরুরি হয়ে পড়েছিল দেশের শাসকদলের কাছে। ২০২৪-এ ভোটের আগে রাহুল যাতে বিরোধীদের মুখ না হয়ে উঠতে পারে, তাই বড্ড তাড়া পড়ে গিয়েছিল সুরাটের জেলা দায়রা আদালতের। সেইসঙ্গে লোকসভার সচিবালয়ের। আমাদের ভুললে চলবে না, যিনি এখন লোকসভার প্রধান তিনি একসময় খাকি হাফপ্যান্ট পরে আরএসএসের প্যারেড ও ডিল করতেন। আর সংঘ ও তার রাজনৈতিক দল বিজেপি চায় ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবির এমন সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আসুক যাতে ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ইন্তেকাল ঘটিয়ে দেওয়া যায়। গোটা ঘটনাটাকে বিরোধীরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে দেগে দিয়েছেন। খোদ বলেছেন, "দেশের সাংবিধানিক গণতন্ত্রের নয়া নীচতার আমরা সাক্ষী থাকলাম।" আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল থেকে বিআরএস নেতা কে চন্দ্রশেখর রাও, উদ্ধব ঠাকরে থেকে সীতারাম ইয়েচুরি, সবাই বিজেপি ও তাদের পরিচালিত লোকসভার এমন আচরণকে ধিক্কার জানিয়েছেন। রাহুলকে এভাবে শায়েস্তা করার গৈরিক অভিসন্ধির বিরুদ্ধে জনতার কাছে যাওয়ার ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। তাদের দাবি, সেটা তো রুখতে পারবেন না মোদী-শাহরা। সুরাট আদালতে তাঁর সাজা শোনার পর রাহুল মহাত্মা গান্ধীকে শরণ নিলেন। পথে, আদর্শের পথে হাঁটার কথা বললেন। এক তিনি বলেন, "সত্যের পথ হল আমার ধর্ম। অহিংসার ওপর প্রতিষ্ঠিত সেই পথ। সত্যই আমার ঈশ্বর, অহিংসা হল সেই সত্যের পথে চলার মাধ্যম।" রাহুলের এই বার্তা নিশ্চয়ই প্রণম্য। কিন্তু আজকের এই পরিস্থিতির জন্য কি রাহুল গান্ধীর কোনও ভূমিকা নেই? অবশ্যই আছে। সুরাট আদালতে যখন বিচারক রায় দেওয়ার আগে তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি কি মোদী পদবি নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন সেজন্য অনুতপ্ত? রাহুলের পালটা জবাব ছিল, "অনুতাপের কী আছে। রাজনীতির মঞ্চ থেকে রাজনীতির কথা বলেছি।" কৌশলগত দিক থেকে দেখলে, এই জবাব যথার্থ নয়। তার ফল ফলেছে। মনে রাখতে হবে, যে খেলার যে নিয়ম। রাহুলের নাবালকত্বর আরও একটা দিক স্পষ্ট হওয়া দরকার। ২০১৩ সালে অক্টোবরে লিলি টমাস বনাম ভারত সরকারের এক মামলায় এক যুগান্তকারী রায় দেয়। বিচারপতি এ কে পট্টনায়ক ও বিচারপতি এস জে মুখোপাধ্যায়ের বেঞ্চ সেদিন রায় দেয় জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ধারাটি অসাংবিধানিক। যে কোনও স্তরের আদালতই কোনও সাংসদ বা বিধায়কের বিরুদ্ধে যদি দু'বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য জেল সাজা দেয়, আর সেই সাজা যদি কার্যকর হয় তবে সেই ব্যক্তির বিধায়কপথ বা সাংসদপদ খারিজ হয়ে যাবে। এই রায়ের বিপদ বুঝে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং নিজের মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত লালুপ্রসাদ যাদবকে রক্ষা করতে একটি অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশ এনেছিলেন। যাতে করে সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়কে ঠেকানো যায়। কিন্তু তখনকার প্রকাশ্যে দাঁড়িয়ে সেই অর্ডিন্যান্সের শুধু বিরোধিতাই করেননি, ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। রাজনীতি বা পাশা খেলার কী দুর্বিপাক আজ সেই আইনেই নিজের সাংসদপদ খোয়ালেন রাহুল গান্ধী।


from Bengali News, বাংলা খবর, Bangla News, Ajker Khobor, Latest Bengali News - Ei Samay https://ift.tt/dANE0Lp
Previous article
Next article

Leave Comments

Post a Comment

ads

Articles Ads 1

ads

Advertisement Ads