আধার আতঙ্কে হাঁড়ি চড়েনি গ্রামের বাড়িতে https://ift.tt/Qm0Pfw6 - MAS News bengali

আধার আতঙ্কে হাঁড়ি চড়েনি গ্রামের বাড়িতে https://ift.tt/Qm0Pfw6

রূপক মজুমদার, জামালপুরতবে কি হারাতে হবে ভিটে? এটাই এখন প্রশ্ন জামালপুরের জৌগ্রাম, আঝাপুর, আবুজহাটির কয়েকশো মানুষের। আবুজহাটি ১ পঞ্চায়েতের জুথিহাটি গ্রামে শুক্রবার কারও বাড়িতে হাঁড়ি চড়েনি। ভিটে হারানোর ভয়ে কান্নাকাটি জুড়েছেন গ্রামের মহিলারা। গ্রামেরই কিছু ছেলে উদ্যোগী হয়ে খিচুড়ি রান্না করেছেন। এদিনের খাবারের ব্যবস্থা সেখানেই। মাথায় বাজ পড়ার মতো গ্রামগুলোর সাতশো পরিবারের নাগরিকত্ব নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা ইউআইডিএআই নামে ডাকযোগে তাঁদের বাড়িতে এসেছে চিঠি। সেই চিঠিতে প্রায় চার হাজার গ্রামবাসীর আধার ডিঅ্যাক্টিভেট করার কথা জানানো হয়েছে। মতুয়া সম্প্রদায়ের ওই পরিবারগুলোর সদস্যরা এর পিছনে রাজনীতি দেখছেন। কী ভাবে? স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে এই পরিবারগুলো বিজেপিকে সমর্থন করে এলাকায় মিটিং মিছিলে যোগ দিয়েছিল। পরে তারাই শাসকদল তৃণমূলের ছত্রছায়ায় চলে আসে। সামনে লোকসভা ভোট। এলাকার প্রায় চার হাজার ভোট যদি তৃণমূলের দিকে চলে যায় তাহলে তা বিজেপির পক্ষে ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। তাই এভাবে ভয় দেখিয়ে আধার নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। এলাকার বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ‘আমরা মমতাবালা ঠাকুরের অনুগামী। ওঁর কথায় আমরা চলি। স্থানীয় বিজেপি নেতাদের কাছে খবর পেয়ে শান্তনু ঠাকুর আমাদের এখান থেকে তাড়ানোর চেষ্টা করছেন। আমাদের রেশন বন্ধ। ব্যাঙ্ক থেকে টাকা পাচ্ছি না। এমন সমস্যায় পড়তে হবে ভাবতেও পারিনি।’ সজল ব্যাপারী নামে এক যুবক বলেন, ‘মমতাবালা ঠাকুরের নির্দেশে আমরা তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছি। সেটাই রাগ বিজেপির। তারা শান্তনু ঠাকুরকে দিয়ে আমাদের আধারকার্ড বাতিল করাচ্ছে।’ জানাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গে তাঁরা জন্মেছেন, রয়েছে ভোটারকার্ড। পঞ্চায়েত, লোকসভা ও বিধানসভায় ভোটও দিয়েছেন। বিষয়টিতে সুর চড়িয়েছে তৃণমূল। রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম মুখপত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, ‘আধারকার্ডের জন্য জমা দেওয়া তথ্য যাচাই করতে ১৪-১৫ বছর সময় লেগে গেল? লোকসভার আগে মনে পড়ল এই লোকগুলোর আধার বাতিল করা উচিত? আসলে এটা সিএএ চালু করার প্রক্রিয়া। ওই সাতশো পরিবার মতুয়া সম্প্রদায়ের লোক। তাঁরা আমাদের দলের সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের অনুগামী। ফলে ভোটের আগে এঁদের ভয় দেখিয়ে নিজেদের দিকে টানতে মরিয়া বিজেপি।’ এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই বলে জানাচ্ছে বিজেপি। দলের যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক দেবজ্যোতি সিংহরায় বলেন, ‘আমরা শুনেছি বিষয়টি। এতগুলো পরিবারের এই অবস্থা কেন হলো দলগত ভাবে আমরাও তা জানার চেষ্টা করছি। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। দেশে এত মানুষের আধারকার্ড রয়েছে, শুধু জামালপুরে কেন এটা হবে? হয়তো ওঁরা ইউআইডিএআই থেকে পাঠানো মেসেজ দেখেননি। বিষয়টি মানবিকতার দিক থেকে দেখার জন্য আমরাও দলীয় নেতৃত্বকে বলেছি।’ জেলা বিজেপির মুখপাত্র সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘সিএএ নিয়ে কোনও নোটিফিকেশন জারি করা হয়নি। এটা একটা গভীর যড়যন্ত্র। প্রশাসনের উচিত এখনই তদন্ত করে দেখা, না হলে এটা মহামারির আকার নেবে।’ যদিও শুধু জামালপুরে এমন ঘটনা ঘটেছে তা নয়। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থেকেও আধার ডিঅ্যাক্টিভেট করার খবর এসেছে। জেলার হেড পোস্ট অফিসে হাজারেরও বেশি আধার ডিঅ্যাক্টিভেট করার চিঠি জমা পড়েছে। শুক্রবার জামালপুরের ওই সব এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছে, বাড়ির দলিল থেকে জমির পরচা সবই রয়েছে গ্রামবাসীর নামে। রয়েছে বিদ্যুতের লাইন, গ্যাসের কানেকশন। এলাকায় জমি কিনে চাষাবাদও করেন অনেকে। এই অবস্থায় আধার বাতিলের চিঠিতে জীবনের ছন্দই হারিয়ে গিয়েছে এঁদের।জুথিহাটি গ্রামের বাসিন্দা লাভলি বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের ঘরে হাঁড়ি চাপেনি। নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়েছি। পাড়ার ছেলেরা খিচুড়ি রান্না করছে। সেটাই খাব। ভিটে হারানোর যন্ত্রণা বাপ-মায়ের কাছে জেনেছি। এখন কি সেই যন্ত্রণায় আমাদেরও ভুগতে হবে?’


from Bengali News, Latest Bangla Sangbad, News in Bengali, বাংলা খবর - Ei Samay https://ift.tt/WIBy8ZU
Previous article
Next article

Leave Comments

Post a Comment

ads

Articles Ads 1

ads

Advertisement Ads