বক্স অফিসের ঊর্ধ্বে উঠে গেলে, ব্যাগ গুছিয়ে চলে যাওয়া উচিত : রানি https://ift.tt/HtoQwD5 - MAS News bengali

বক্স অফিসের ঊর্ধ্বে উঠে গেলে, ব্যাগ গুছিয়ে চলে যাওয়া উচিত : রানি https://ift.tt/HtoQwD5

ভাস্বতী ঘোষ'মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে' ছবিটি দেখার পর মুম্বইয়ে রানি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথোপকথনে ভাস্বতী ঘোষযশরাজ স্টুডিয়ো। পরপর ঘরের বাইরে তারকাদের নাম। যেমন শাহরুখ খান। তেমন আরএমসি, অর্থাৎ রানি মুখোপাধ্যায়। ঘরের দরজা খুলে গেলে, রানির সেই হাসি, যার আকর্ষণের বর্ণনা দিতে শব্দ কম পড়ে। আগের রাতে দেখেছি 'মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে' ছবিটি। বাঙালি এক মা ঠিক করে সামলাতে পারছেন না তাঁর বাচ্চাদের, এই অভিযোগে নরওয়ে সরকার, বাচ্চাদের দেখাশোনার দায়িত্ব ছিনিয়ে নিয়েছিল। সন্তানদের কীভাবে নিজের কাছে ফেরাবে মা, সে লড়াই ছবি জুড়ে। ছবিতে যেমন দেবিকার (রানির চরিত্র) চোখ দিয়ে জল পড়ে, তেমনই দর্শকের আসনে বসে, চোখ ভিজে যাচ্ছিল। অনুভব করছিলাম, এ ছবির জন্য রানি নিজেকে নিংড়ে দিয়েছেন। তাই প্রথম প্রশ্ন, এমন চ্যালেঞ্জিং একটা চরিত্র পেয়ে, প্রধান ভাবনাটা কী ছিল? রানির উত্তর, 'প্রথমে গল্পটার আবেগ, চরিত্রটির আবেগের যে ওঠাপড়া, সেটার সঙ্গে একাত্ম হয়েছিলাম। তারপর গুরুত্বপূর্ণ ছিল, দেবিকাকে দর্শকদের সামনে কীভাবে আনা হবে। ওকে কেমন দেখতে লাগবে, কেমন আচরণ হবে এইসব'। আপনার মা হওয়াটা কতটা মিশে রয়েছে দেবিকার সঙ্গে? 'একজন মেয়ে থেকে যখন মা হই আমরা, সব কিছু পালটে যায়। মা হওয়ার আগে আমি যেমন মানুষ ছিলাম, আমি এখন তারচেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা একজন মানুষ। আমার বরও (প্রযোজক আদিত্য চোপড়া) সেটাই বলে (হাসি)! তবে এই ছবিটার জন্য পরিচালকের মাধ্যমে আমার সাগরিকাকে (সেই মা, যাঁর সঙ্গে ঘটনাটি ঘটেছিল) চেনা দরকার ছিল। সেইভাবে দেবিকাকে আমি ফুটিয়ে তুলেছি। সাগরিকার সঙ্গে আমি সরাসরি কথা বলিনি সতর্কভাবে। একইভাবে, মা হিসেবে আমি যেমন তারও কোনও প্রভাব দেবিকার উপর পড়ুক, সেটা চাইনি। সাগরিকা যে মানসিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, সেখানে নিজেকে রাখাও খুব কষ্টকর। তাই আমি অপেক্ষাকৃত সহজ রাস্তা নিয়েছি। আমি ভেবেছি, যদি আমাকে আর দাদাকে মা'র থেকে কেড়ে নেওয়া হতো, তা হলে মা কী করতো'।এই ছবিতে বাচ্চাদু'টোকে যখন কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, তখন গাড়ির পিছনে ছুটতে গিয়ে রানি ছিটকে পড়ে যান। যখন শুটিং করছিলেন, তখন কি কষ্ট হতো? রানি এক মুহূর্ত ভেবে বলেন, 'ক্যামেরাবন্দি হওয়ার মুহূর্তগুলো কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু একজন অভিনেত্রীর জন্য নিজেকে ওই কষ্টটা থেকে বিচ্ছিন্ন করে নেওয়া দরকার। কষ্টটায় বয়ে গেলে, তা চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলার পথে বাধা হতো'। ' মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে' ছবিটার অংশ হয়ে, দর্শকের কাছে কী পৌঁছে দিতে চান? রানি খোলসা করলেন, 'সত্যি ঘটনাটা আমি যখন শুনেছিলাম, আমি বিশ্বাস করিনি! কারণ আমরা যখন দেখি বিদেশে কোনও ভারতীয় পরিবার থাকছে, ধরেই নিই, সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে তাঁরা ভালো জায়গায় আছে, সুখী আছে। কিন্তু এই যে একটা ভারতীয়-বাঙালি পরিবার, এমন কষ্টের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, এটা জনসমক্ষে আনা দরকার ছিল। ২০১১-তে ভারতীয় মিডিয়া এটা নিয়ে লিখতে শুরু করে, সংসদে এই ঘটনাটা নিয়ে কথা হয়, তা-ও দেশের একটা বড় অংশের মানুষের কাছে তখন ঘটনাটা পৌঁছায়নি। অভিনেত্রী হিসেবে আমার মনে হলো, দেশের একটা বড় অংশের মানুষের কাছে এই বার্তাটা পৌঁছে দেওয়া দরকার যে, সংস্কৃতির ফারাকের জন্য বিদেশে গিয়ে মানিয়ে নিতে অসুবিধাও হতে পারে। এই ছবিটার ট্রেলার আসার পর এখন কিন্তু অনেক এনআরআই বলতে শুরু করেছেন, তাঁরা এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন বিদেশে। বা ওঁদের রোজকার জীবনে বড্ড বেশি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে! ভারতীয় নাগরিক হিসেবে আমি গর্ববোধ করি। এ দেশের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব বলে বিশ্বাস করি। আমাদের যে দেশ ছেড়ে চলে যেতেই হবে, এমন নয়। আর আমরা যেমন, আমরা তেমনই থাকবো। ছবিটা সে জন্যই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র মা'র ভালোবাসার গল্পের বাইরেও বিস্তৃত ছবিটার পরিধি'। রানি প্রকৃতঅর্থেই তাবড় তারকা। তারকাসত্তা আর অভিনেত্রীসত্তাকে তিনি আলাদা করেন কীভাবে? রানি ব্যাখ্যা করলেন, 'আমি আলাদা করি না দু'টো সত্তাকে। আমার জার্নিটাই অন্যরকম। আগেও আমি 'যুবা', 'ব্ল্যাক', 'নো ওয়ান কিলড জেসিকা' করেছি। নিজের পিঠ চাপড়ে দিই এটা ভেবে যে, আমি ভার্সেটাইল অভিনেত্রী। বিভিন্ন ভারতীয় নারী চরিত্র আমি বড়পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে চাই। এবার একজন মায়ের চরিত্র করলাম'। ছবির ব্যবসা নিয়ে কতটা ভাবেন? 'ভীষণ ভাবি। বক্স অফিসের ঊর্ধ্বে উঠে গেলে, ব্যাগ গুছিয়ে চলে যাওয়া উচিত। আমি যে এত কষ্ট করে কাজটা করছি, বাচ্চাটাকে ছেড়ে শুটিংয়ে থাকছি, তার কারণ আমি চাই দর্শক আমার কাজটা উপভোগ করুন। তাঁরা আমার কাজ দেখতে না এলে, এত কষ্ট করবো কেন?', বক্তব্য রানির। এই ছবিতে আপনার কাজ দেখে, আদিত্য বিশেষভাবে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন...রানি হেসে বললেন, 'ছবিটাকে আদির মনকে সত্যিই নাড়া দিয়েছে। আদিকে আমি খুব কম ওরকমভাবে দেখি, যেভাবে দেখলাম, এই ছবিটার পরে। কাজটা দেখার পর, ওর মধ্যে আমাকে নিয়ে গর্ব ছিল।'ছবিটায় যেমন আমরা দেখি, মা বাচ্চাকে হাত দিয়ে খাবার মেখে খাইয়ে দিচ্ছে, আপনিও কি সেটাই করেন? 'আমি আদিরাকে হাত দিয়ে মেখেই খাইয়ে দিতে ভালোবাসি। এখন ও সবে নিজে হাত দিয়ে খেতে শুরু করেছে। আদিরা ভাবে ও নিজে হাত দিয়ে মেখে খেলে, আমাকে খুব খুশি করা যাবে। আবার বলে, 'মাম্মা আমি তো বাঙালি, আমার হাত দিয়ে মেখে খেতে ভালোলাগে'', এই কথাগুলো বলার সময় মুখটা উজ্জ্বল হয়ে যায় রানির। রানির বিপরীতে কাজ করেছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। একটা দৃশ্যে অনির্বাণ রানিকে একটা থাপ্পড় মারার পর, রানি সঙ্গে-সঙ্গে অনির্বাণকে একটা থাপ্পড় মারেন। সে সময় সিনেমা হলে হাততালি পড়েছে। সেটার উল্লেখ করতেই রানি হেসে বললেন, 'এটা বাঙালি মেয়েদের খুব পছন্দ হবে'। তারপর তাঁর সংযোজন, 'অনির্বাণ এত পরিণত আর দক্ষ একজন অভিনেতা, ওঁর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা দুর্দান্ত'।এ ছবিতে আপনার প্রিয় দৃশ্য কোনটা? 'দেবিকা যখন ভারতের সরকারকে বিষয়টা জানাতে পারলো, তখন বাড়ি ফিরে বহুদিন পর ওর খিয়ে পায়। যেভাবে ও দুধ-ভাত-কলা মেখে খায়, সেই দৃশ্যটা আমার মনের খুব কাছের', গলায় আবেগ নায়িকার।এই ছবিটার জন্য আপনার চেহারাটা ভারী, চুল এলোমেলো, মুখে ক্লান্তির ছাপ। নায়িকারা যেমন নিরাপত্তাহীনতা ভোগেন, তার ঊর্ধ্বে নিজেকে নিয়ে গেলেন কীভাবে? রানি অনর্গল, 'বিশ্বের তাবড় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কত ধরনের চরিত্র করছেন। ভারতীয়দের সেই প্রতিভা আছে। আমাদেরও নিজেদেরকে সেইভাবে তুলে ধরতে হবে। রোজকার কাজ করে যাওয়ার মতো করে, কাজ করলে হবে না। এমন কিছুই করতে হবে, যা রোজ হয় না, যা শিকড়ে থেকে উঠে আসা। ছবির বিষয়ের উপর সৎ থাকা জরুরি। আমরা বাঙালি বলে গর্বিত। এই ছবিটা যখন করেছি, তখন বাঙালিরা ঠিক যেমন, তার উপরই জোর দেওয়া হয়েছে। বাঙালি বর-বউ বাংলাতেই ঝগড়া করে। চরিত্রগুলো বাঙালি বলে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা বাঙালি। একটা পাঞ্জাবি গান ঢুকিয়ে দেওয়া হয়নি, ভারতীয় দর্শকের ভালো লাগবে বলে। আমি শুধুমাত্র চরিত্রটার উপর ন্যায় করার কথা ভেবেছি। ২৬-২৭ বছর ধরে আমাকে দর্শক দেখছেন। ওঁদের সামনে আমার আর কোনও নিরাপত্তাহীনতা নেই, সঙ্কোচ নেই'।


from Bengali News, বাংলা খবর, Bangla News, Ajker Khobor, Latest Bengali News - Ei Samay https://ift.tt/rFKdmgB

Leave Comments

Post a Comment

ads

Articles Ads 1

ads

Advertisement Ads