'ভাইপো' ED-র চাপে বলেই কি মমতার চিঠি বিরোধী নেতাদের? https://ift.tt/wrBscYv - MAS News bengali

'ভাইপো' ED-র চাপে বলেই কি মমতার চিঠি বিরোধী নেতাদের? https://ift.tt/wrBscYv

প্রশান্ত ভট্টাচার্য গত ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিনে NCPসুপ্রিমো শরদ পওয়ারের মুম্বইয়ের বাড়িতে বৈঠক করে কার্যত UPA-র অস্তিত্ব অস্বীকার করেছিলেন। মমতাকে সেদিন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, আপনার কি মনে হয় শরদজির UPA-র নেতৃত্ব দেওয়া উচিত? প্রশ্ন শুনে মমতার চটজলদি জবাব ছিল, "আরে কোথায় UPA! এর কোনও অস্তিত্বই নেই।" সেই কটাক্ষের পরে চার মাসও কাটেনি, তৃণমূল সুপ্রিমো এবার নিজেই যেন UPA বা ব্রডার UPA-র শরণ নিচ্ছেন। চব্বিশের লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে নতুন করে BJP-বিরোধী সব দলকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসনেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৭ মার্চ দলের চেয়ারপার্সন হিসেবে সব বিরোধী নেতৃত্ব ও অ-BJP রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি পাঠিয়ে এক সঙ্গে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন মমতা। সকলকে একসঙ্গে বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তৃণমূলনেত্রীর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করে গণতন্ত্রের উপর বড় আক্রমণ হানছে কেন্দ্রের শাসকদল BJP। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি চিঠিতে লিখেছেন, রাজনৈতিক প্রতিশোধ তুলতে ইডি, সিবিআই, আয়কর, সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনের মতো সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করে বিরোধী দলগুলোকে টার্গেট করে তাদের হেনস্থা করছে BJP। যখন নির্বাচন আসে তখনই কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি অতিসক্রিয় হয়ে ওঠে। অথচ BJP শাসিত রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রীয় সংস্থা পাঠানো হয় না। ভাবটা এরকম, সে সব রাজ্যে কোনও অনাচার, কোনও ফাউল হয় না। এমনকী, উন্নাও, হাথরস, লখিমপুর খেরির ঘটনার পরেও অমিত শাহর মন্ত্রক থেকে কোনও কেন্দ্রীয় টিম পাঠানো হয়নি। BJP শাসিত রাজ্যগুলির সরকার সম্পর্কে একটা সুন্দর ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। ‌বিরোধী নেতানেত্রীদের দমন করতে কেন্দ্রীয় সংস্থার এই অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সকলকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন মমতা। তিনি লিখেছেন, "আমরা সুশাসন ও স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী। কিন্তু BJPর এই প্রতিহিংসার রাজনীতি কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। BJP শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা ধারাবাহিকভাবে আদালতের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন। এটা দুঃখজনক। বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমার আস্থা আছে। কিন্তু রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে মানুষ সুবিচার পাচ্ছেন না, যা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপদজনক।" মমতার বক্তব্য, দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংবাদমাধ্যম, বিচারব্যবস্থা ও জনগণ গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এর মধ্যে কোনও এক স্তম্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে। চিঠিতে তৃণমূলনেত্রী আরও উল্লেখ করেছেন, লাগাতার দেশের ফেডেরাল কাঠামো নষ্ট করে দিতে চাইছে মোদী সরকার। বিচার ব্যবস্থার একাংশের ওপর প্রভাব খাটাচ্ছে BJP। তাঁর অভিযোগ, লোকসভায় বিরোধীরা ওয়াক আউট করা সত্ত্বেও দিল্লি স্পেশাল পুলিশ সংশোধনী বিল ২০২১ ও সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন সংশোধনী বিল ২০২১ পাশ করিয়েছে কেন্দ্র। ফলে ইডি ও সিবিআই অধিকর্তাদের কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারবে কেন্দ্রীয় সরকার, যা সুপ্রিম কোর্টের রায়কে লঙ্ঘন করছে। এই পরিস্থিতিতে সব বিরোধী দলকে এককাট্টা হয়ে BJPর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামার আহ্বান জানিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সকলকে সুবিধেমতো সময়ে ও জায়গায় বৈঠকে বসার প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি। মমতার চিঠিতে তৎক্ষনাৎ সাড়া দিয়েছে শরদ পওয়ারের এনসিপি, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার মতো দল। মমতার অভিযোগকে সমর্থন করলেও BJPর বিরোধিতার প্রশ্নে তৃণমূলের বিরুদ্ধে পালটা দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছে বাম ও কংগ্রেস। অধীর চৌধুরী বলেছেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশ্বাস করা যায় না।" বামরা তো সরাসরি বলছেন, "ভাইপো থেকে শুরু করে ভাইপোর শ্যালিকা, সবাই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার চাপে পড়েছেন বলে মমতা এখন তৎপর হয়েছেন।" আর দুর্মুখরা বলছেন, "দিদি-মোদী সেটিং হচ্ছে না বলেই এত চিঠি লেখালেখি!" এই দাবি অস্বীকারও করা যায় না। কেন না, NCPনেতা নবাব মালিক জেলে। চাপে আছেন শরদ পওয়ারও। পওয়ার তো স্পষ্ট বলেছেন, "নবাব মালিক অত্যন্ত স্পষ্টভাষী। আমরা নিশ্চিত ছিলাম, তাঁকে সমস্যায় ফেলার জন্য নতুন করে ষড়যন্ত্র করা হবে। BJPর বিরুদ্ধে যদি কোনও মুসলিম সরব হন, তখনই তারা তাঁকে দাউদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। আমি যখন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখনও তাঁরা আমাকে দাউদের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। যাঁরা কেন্দ্রীয় সংস্থার অপব্যবহার নিয়ে মুখ খুলছেন, তাদের এইভাবে কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে হেনস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।" কেন্দ্রীয় এজেন্সির চাপে আছেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরেও। অন্যদিকে, কংগ্রেসনেতা ও তৃণমূল সমর্থিত রাজ্যসভার সাংসদ অভিষেক মনু সিঙভি বলেছেন, "BJP বিরোধিতার স্তম্ভ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।" তিনি টুইটারে লিখেছেন, "BJP বিরোধী দলগুলোর এখন ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। BJP বিরোধী জোটের ক্ষেত্রে মমতাই হয়ে উঠবেন জোটের স্তম্ভ।" কার্যত বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অভিষেক মনু সিঙভির এই বার্তা দলের কাছে অত্যন্ত অস্বস্তিজনক হয়ে উঠতে পারে। তার কারণ, সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কংগ্রেসের দূরত্ব বেড়েছে বই কমেনি। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজনীতিতে অভিষেক মনু সিঙভির বার্তা কী প্রভাব ফেলে, সেদিকে নজর রেখেই ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, আরও একবার রাজ্যসভায় যাওয়ার জন্য ইট পেতে রাখলেন সিঙভি। কেন না, কংগ্রেসের যা হাল, তাতে সাংসদ হতে হলে মনুভাইকে তৃণমূলেই হয়ত শেল্টার নিতে হবে। তবে এসব লেনদেনের হিসেব ছেড়েই বলা যায়, অধীর বা সেলিম যাই বলুন, কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতারা ভাবতে শুরু করেছেন। এদিকে, তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একরাউন্ড কথা হয়েছে বিজু জনতা দলের সুপ্রিমো তথা ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের। দুই রাজনীতিকের কথাকে যতই সৌজন্যমূলক বলে জাহির করা হোক, তা কখনই সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক হবে না, হতে পারে না। এদিকে UPA-কে চাঙ্গা করতে নেতৃত্বে রদবদল প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে নয়া বিতর্কে ইন্ধন দিয়েছে শিবসেনার মুখপত্র 'সামনা'। পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, কংগ্রেসই UPA-র মূল ভিত্তি। তাই কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন UPAতে রদবদল প্রয়োজন। সেখানে প্রায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নেতৃত্ব দেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এ কথাও বলা হয়েছে, কংগ্রেসের মধ্যে কিছু পারিবারিক সমস্যা থাকতে পারে, তবে এই সমস্যা বিরোধীদের ঐক্যে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠির সঙ্গে সিঙ্ক করিয়ে শিবসেনার মুখপত্র 'সামনা'য় লেখা হয়েছে, UPA-র ছাতার তলায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে BJP বিরোধী দলগুলিকে। শরদ পওয়ার, উদ্ধব ঠাকরে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কে সি রাও, এম কে স্ট্যালিনের মতো অভিজ্ঞ নেতানেত্রীরা রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা উচিত। কিন্তু কংগ্রেস সেই কাজে এগিয়ে আসেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হয় বলে মন্তব্য করা হয়েছে 'সামনা'য়। সেইসঙ্গে বলা হয়েছে, কংগ্রেসের কিছু পারিবারিক সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু তা যেন বিরোধী ঐক্যের পথে বাধা না হয়, সেটা দেখতে হবে। এখানে মনে রাখা উচিত, উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভার ভোটের ফল বেরোবার পরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দিয়েছিলেন, আঞ্চলিক দলগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, কংগ্রেসের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। অর্থাৎ, কংগ্রেসকে রেখেই এগোতে হবে, তবে নির্ভর করে নয়। এবার শিবসেনার মুখপত্রও প্রায় একই সিনট্যাক্সে কথা বলছে। কয়েকদিন আগে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পালানিয়াপ্পন চিদম্বরমও প্রসঙ্গক্রমে মন্তব্য করেছিলেন, যেখানে যে আঞ্চলিক দল শক্তিশালী, কংগ্রেসকে তার হাত ধরতে হবে। এসবই কিন্তু একটা জিনিস প্রতিষ্ঠা করছে, মোলায়েম গণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদকে ঠেকাতে হলে, বড়-ছোট, পুরনো-নতুন, শতাব্দী প্রাচীন, এইসব ইগো নিয়ে চলবে না। সব বিরোধীদের এক ছাতার তলায় আসতে হবে। মমতা সেই সলতে পাকানোর কাজটা শুরু করেছেন। (এই প্রবন্ধে প্রকাশিত মতামত সম্পূর্ণ ভাবে লেখকের ব্যক্তিগত। এই সময় ডিজিটাল কোনও ভাবেই লেখার দায়ভার বহন করে না।)


from Bengali News, Bangla News, বাংলা সংবাদ, বাংলা নিউজ, News in Bengali, কলকাতা বাংলা খবর - Ei Samay https://ift.tt/QzMO164
Previous article
Next article

Leave Comments

Post a Comment

ads

Articles Ads 1

ads

Advertisement Ads