তাড়া করে ফেরে মায়ের স্মৃতি, নিজের তৈরি ভ্যানে করোনা রোগী নিয়ে হাসপাতাল ছুটছেন রবিউল https://ift.tt/3isNER5 - MAS News bengali

তাড়া করে ফেরে মায়ের স্মৃতি, নিজের তৈরি ভ্যানে করোনা রোগী নিয়ে হাসপাতাল ছুটছেন রবিউল https://ift.tt/3isNER5

এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক : বর্তমান করোনা মহামারীতে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া নিয়ে যে কালোবাজারি চলছে তা চাক্ষুষ করেছেন বছর সত্তরের রবিউল। করোনা আক্রান্ত মা অক্সিজেনের ডন্য ছটফট করলেও টাকার অভাবে তড়িঘড়ি অ্যাম্বুল্যান্সে করে মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে রিক্সায় করে মা-কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে পথেই মা-কে হারাতে হয়। চোখের সামনে এভাবে মায়ের মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি তিনি। তাই আর কাউকে যাতে এভাবে বিনা চিকিৎসায় মরতে না হয়, অ্যাম্বুল্যান্স কালোবাজারির মধ্যে পড়তে না হয়, সেজন্য নিজের রিক্সাকেই কেটে ভ্যান বানিয়ে করোনা রোগী পরিবহণ শুরু করছেন বর্ধমান শহরের বাবুরবাগের বাসিন্দা শেখ রবিউল হক। তাঁর একটাই জেদ, হাল ছাড়ব না, মাটি কামড়ে ধরে রাখব। এটা দেখে সবাই যেন বলতে পারে, ৭০ বছরের বু্ড়ো কী করতে পারে! পেশায় রিক্সাচালক শেখ রবিউল সম্প্রতি বিনা চিকিৎসায় পরপর দুজনের মৃত্যু চাক্ষুষ করেছেন। প্রথমে মাস দুয়েক আগে তাঁর বাড়ির পাশে এক বৃদ্ধ করোনা আক্রান্ত হন। তাঁকে ফেলেই পালিয়ে যায় তাঁর ছেলে। ফলে বিনা চিকিৎসায় বাড়িতেই মারা যান ওই বৃদ্ধ। এরপর রমজান মাসে রবিউলের মা করোনা আক্রান্ত হন। রবিউল অবশ্য মা-কে ফেলে যাননি। বরং সাধ্যমত চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স চালক ৩ হাজার টাকা ভাড়া চান। যা দেওয়া রবিউলের পক্ষে সম্ভব ছিল না। ফলে নিজের রিক্সায় করেই মা-কে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হন রবিউল। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই তাঁর মা মারা যান। তারপর থেকেই ধিক্কারে নিজেই করোনা রোগী পরিবহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন রবিউল। রবিউলের স্ত্রী ও একটি ছেলে রয়েছে। আর নিজস্ব সম্বল বলতে অ্যাসবেস্টের চাল সহ একটি এক কামড়ার মাটির ঘর এবং একটি রিক্সা। এই রিক্সা-ই তাঁর উপার্জনের একমাত্র পথ। নিজের বার্ধক্য ভাতাও নেই। সারাদিন রিক্সা চালিয়ে যা উপার্জন হয়, তা দিয়ে কোনরকমে সংসার চালান। তারপরেও সংসারের চিন্তা না করে করোনা রোগীদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন বছর সত্তরের রবিউল। জমানো সামান্য পুঁজি ও এদিক-ওদিক থেকে ৩ হাজার টাকা জোগাড় করে, তা দিয়ে নিজের রিক্সাকে কেটে ভ্যানে পরিণত করেন। তারপর সেই ভ্যান নিয়েই শুরু করে দেন করোনা রোগী বহন পরিষেবা। এলাকার সকলে যাতে তাঁর এই কাজ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে পারে, প্রয়োজনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, সেজন্য ওই রিক্সা-ভ্যানের গায়ে পোস্টারও সেঁটেছেন। যেখানে লেখা রয়েছে, ‘অসহায় করোনা ব্যক্তিদের জন্য হাসপাতাল পরিষেবা দেওয়া হবে।’ সঙ্গে যোগাযোগ নম্বর হিসাবে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়েছেন। একেবারে বিনামূল্যে এই পরিষেবা দিয়ে চলছেন রবিউল। মূলত বর্ধমান শহরের নার্স কোয়ার্টার মোড়ে সারাদিন রিক্সাভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন রবিউল। ডাক পড়লেই ছুটে চলে যান করোনা রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে। এদিকে উপার্জনের পথটুকু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রবিউলের সংসারে টান পড়েছে। কোনোরকমে চেয়েচিন্তে চলছে তিনজনের সংসার। তবু যেন ‘কুছ পরোয়া নেই’ রবিউলের। নিজের লক্ষ্যে অবিচল তিনি। রবিউলের কথায়, ‘ফোন করে কেউ করোনা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডাকলে আনন্দ হয়।’ যখন সংক্রমণের ভয়ে সকলে করোনা রোগীর থেকে দূরে থাকতে চান, তখন ৭০ বছরের রবিউলের এই উদ্যোগ অভাবনীয়। এপ্রসঙ্গে রবিউল বলেন, ‘আগে আমার কাছে করোনা প্রতিরোধক কিছু ছিল না। এখন আামার কাছে পিপিই কিট, গ্লাভস, মাস্ক, স্যানিটাইজার আছে। তাই আমি আরও জেদি হয়ে গেছি।’ যদিও স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীই তাঁকে এই সমস্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাই দীপ্ত কন্ঠে তাঁর ঘোষণা, ‘হাল ছাড়ব না, মাটি কামড়ে হাল ধরে রাখব। পিছিয়ে পড়ব না।’ নিজের জেদে এখনও পর্যন্ত বেশ কয়েকজন করোনা রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন রবিউল।


from Bangla News: বেঙ্গলি খবর, Latest News in Bengali, Breaking News In Bengali, সর্বশেষ সংবাদ | Eisamay https://ift.tt/3vOu9pD
Previous article
Next article

Leave Comments

Post a Comment

ads

Articles Ads 1

ads

Advertisement Ads