সোশ্যালিস্ট, সেকুলার হঠাতে মামলা, রক্ষা বেসিক ফিচারে? https://ift.tt/KqXAHVk - MAS News bengali

সোশ্যালিস্ট, সেকুলার হঠাতে মামলা, রক্ষা বেসিক ফিচারে? https://ift.tt/KqXAHVk

এই সময়: ভারত কি আর ‘সমাজতান্ত্রিক’ (সোশ্যালিস্ট), ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ (সেকুলার) রাষ্ট্র থাকবে? গত ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রীর ‘রামরাষ্ট্র’ শব্দ নিক্ষেপ ক্ষমতাসীনদের পরিকল্পনা নিয়ে চর্চা বাড়িয়েছে। শাসক বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে সংবিধানের প্রস্তাবনার ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ মুছে হিন্দুরাষ্ট্র ঘোষণা হবে কিনা--সে নিয়ে জল্পনা বাড়ছে। এরই মধ্যে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে এক জনস্বার্থ মামলার শুনানি সেই জল্পনায় জল-বাতাস যোগ করল। চার বছর আগে প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর দায়ের করা মামলার এ দিন শুনানি ছিল বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তর বেঞ্চে। সংবিধানের প্রস্তাবনা (প্রিয়েম্বেল) থেকে ‘সমাজতান্ত্রিক’, ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ মোছার দাবিতে দায়ের স্বামীর মামলাটির এই ভোটের আবহে শুনানি তাৎপর্যপূর্ণ। সেই শুনানিতে বিচারপতি দত্ত প্রশ্ন তোলেন, যেখানে সংবিধানের প্রস্তাবনায় সুনির্দিষ্ট তারিখের উল্লেখ রয়েছে, সেখানে সেই তারিখ অপরিবর্তিত রেখে কি সংশোধন আদৌ সম্ভব। প্রস্তাবনায় লেখা ২৬ নভেম্বর ১৯৪৯ তারিখটির প্রসঙ্গ টেনেছেন বিচারপতি দত্ত। ওই দিনই সংবিধান পরিষদে স্বাধীন দেশের সংবিধান গৃহীত হয়। সেই অবস্থায় ভারতকে ‘সার্বভৌম গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র’ বলেই শুধু উল্লেখ করা হয়েছিল। ১৯৭৬ সালে ৪২ তম সংবিধান সংশোধনে সার্বভৌম-এর পরে ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ দু’টি যোগ করা হয়। কিন্তু প্রস্তাবনার শেষাংশের তারিখ অপরিবর্তিতই থাকে। আটচল্লিশ বছর পেরিয়ে শীর্ষ আদালতের কোনও বিচারপতি এ বার প্রশ্ন তুললেন, তারিখ পরিবর্তন না করে মূল প্রস্তাবনায় শব্দ যোগের বৈধতা নিয়ে। যদিও বিচারপতি তাঁর প্রশ্নকে ‘অ্যাকাডেমিক’ বলেই উল্লেখ করেন, কিন্তু মামলাকারী স্বামী নিজের পক্ষে যুক্তি লুফে নিয়ে বলে ওঠেন, ‘এটাই আমার প্রশ্ন’।প্রশ্নটা যদিও শুধু তারিখে সীমাবদ্ধ নয়। স্বামীর দাবি, ১৯৭৫ থেকে ’৭৭ জরুরি অবস্থা-পর্বে সংসদে আলোচনা ছাড়াই ইন্দিরা গান্ধী জোরজবরদস্তি সংবিধান সংশোধন করেছিলেন। সংবিধানের ৩৬৮ অনুচ্ছেদে সংশোধন সংক্রান্ত সংসদের ক্ষমতার পরিধির বাইরে গিয়ে প্রস্তাবনায় সংশোধন করা হয়। বিআর আম্বেদকরও সংবিধান পরিষদে বিতর্কে প্রস্তাবনায় এই দুই শব্দ জোড়ার দাবি সমর্থন করেননি বলে মনে করিয়ে দেন স্বামী। তাঁর বক্তব্য, আম্বেদকর বিশেষ ধরনের রাজনৈতিক আদর্শ নাগরিকের উপরে চাপানোর বিরোধিতা করেছিলেন। ৪২ তম সংশোধনী সংবিধানের মূল ভাবনার (বেসিক ফিচার) বিরোধী বলেও যুক্তি দেন স্বামী। মামলায় যুক্ত হতে চেয়ে আবেদনকারী সিপিআইয়ের রাজ্যসভার সাংসদ বিনয় বিশ্বমের তরফে অবশ্য স্বামীর যুক্তি খণ্ডন করে বলা হয়, ১৯৪৯-এর ২৬ নভেম্বরে গৃহীত সংবিধান খুঁটিয়ে পড়লেই ধরা পড়বে, সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ভাবনা গোড়া থেকেই রয়েছে। প্রস্তাবনা থেকে ওই দুই শব্দ অপসারণের চেষ্টাই আসলে হবে সংবিধানের বেসিক ফিচারে অন্তর্ঘাত। ঘটনা হলো, বিজেপি তার জন্মের সময়, সেই ১৯৮০ থেকেই সংবিধানের ৪২ তম সংশোধনীর বিরোধিতা করে আসছে। সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শব্দে তাদের প্রবল আপত্তি। বছর চারেক আগেই বিজেপি সাংসদ রাকেশ সিনহা এই মর্মে সংসদে প্রস্তাবও এনেছিলেন। গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনের পর সাংসদদের যে সংবিধানের বই উপহার দিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার, সেখানেও প্রস্তাবনা অংশে সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ দু’টি ছিল না। যা নিয়ে বিরোধীরা প্রবল বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। ইন্দিরা গান্ধী কিন্তু প্রস্তাবনায় সমাজতান্ত্রিক শব্দ যোগের ব্যাখ্যায় বহু আগেই বলেছিলেন, এটা সোভিয়েত বা অন্য দেশের মডেলে ভাবা হয়নি। এই সমাজতন্ত্র মানে সব কিছুর জাতীয়করণও নয়। ভারত সমাজতন্ত্র অনুশীলন করবে নিজের মতো করেই। বস্তুত, সংবিধানের প্রস্তাবনাতেই সেই ১৯৪৯ থেকে সব নাগরিকের মধ্যে ‘সমতা’ (ইক্যুয়ালিটি)-র উল্লেখ রয়েছে। সেই ভাবনাই প্রস্তাবনায় ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ-যোগে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছিল বলে অনেক সংবিধান বিশেষজ্ঞের বক্তব্য। একই ভাবে সংবিধানের ২৫, ২৬, ২৭ অনুচ্ছেদে ধর্মাচরণ ও বিশ্বাসের স্বাধীনতাকে নাগরিকের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতিদানের মাধ্যমেই সংবিধান-প্রণেতারা ধর্মনিরপেক্ষতার ভাবনাকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে তাঁদের ব্যাখ্যা। সে দিক থেকে সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ সংবিধানের বেসিক ফিচারের অন্তর্ভুক্ত। তবে বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ডে সেই বেসিক ফিচার বা স্ট্রাকচারে বিপন্নতার আশঙ্কা অনেকের মনেই তৈরি হয়েছে। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ১৯৫১-র মে মাসে গুজরাটে নবনির্মিত সোমনাথ মন্দিরের উদ্বোধনে যাননি প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। সেটা স্বাধীন দেশের ধর্মনিরেপক্ষতার আদর্শ মনে রেখেই। মন্দির গড়ায় রাষ্ট্রীয় স্পনসরশিপেও তাঁর আপত্তি ছিল। গত ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিন্তু সেই আদর্শ রক্ষা করেননি। প্রধানমন্ত্রীর দলের প্রাক্তন সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর মামলায় অনেকেই সংবিধানের মূল আদর্শ জলাঞ্জলি দেওয়ার পরিকল্পনাই দেখছেন। সুপ্রিম কোর্ট ফের এপ্রিলের শেষে এই মামলার শুনানি হবে বলে জানিয়েছে। আইনজ্ঞদের অনেকে মনে করাচ্ছেন, ২০০৮ সালে তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি কেজি বালাকৃষ্ণনের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ কিন্তু ‘সোশ্যালিস্ট’ শব্দ চ্যালেঞ্জ করে দায়ের মামলা খারিজ করেছিল। এখন বিষয়টি দুই বা তিন বিচারপতির বেঞ্চের বিচার্য হবে নাকি সাংবিধানিক বেঞ্চে শুনানি প্রয়োজন, সে প্রশ্ন রয়েছে। ১৯৭৩-এর ২৪ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের ১৩ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ সুবিখ্যাত কেশবানন্দ ভারতী মামলায় সংশোধনের নামে সংবিধানের মূল ভাবনা বা বেসিক স্ট্রাকচারে অদলবদল করা যাবে না বলে যে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিল, স্বামীর আবেদনের বিচারে সেই রায়ও গুরুত্বপূর্ণ বলে মত আইনজ্ঞদের।


from Bengali News, Latest Bangla Sangbad, News in Bengali, বাংলা খবর - Ei Samay https://ift.tt/LwAq2xk
Previous article
Next article

Leave Comments

Post a Comment

ads

Articles Ads 1

ads

Advertisement Ads