সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধারে নয়া দিশা বঙ্গকন্যার https://ift.tt/FHJ78mr - MAS News bengali

সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধারে নয়া দিশা বঙ্গকন্যার https://ift.tt/FHJ78mr

কুবলয় বন্দ্যোপাধ্যায় নানা ভঙ্গিতে নাচছে কিছু মানুষ। ছোটরা যেমন দেশলাই কাঠির মতো সরু লাইনের ছবি আঁকে, সে ভাবেই আঁকা। ওই ছবি যে কী ভয়ানক বার্তা বহন করছে, সেটা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না। প্রতিটা মূর্তি যে আসলে এক একটা অক্ষর, ধরে ফেলেছিলেন শার্লক হোমস। স্যর আর্থার কোনান ডয়েলের ‘দ্য ডান্সিং মেন’ গল্পে ছবির অর্থ উদ্ধার করে হোমস ঘোষণা করেছিলেন, ‘একজন হয়তো আবিষ্কার করে, কিন্তু বাকিরাও খুঁজে পায়।’ শার্লক হোমসের মতো একই কথা বলতে পারেন বঙ্গকন্যা বহতা অংশুমালী মুখোপাধ্যায়। গত দশ বছর ধরে এমন একটা প্রহেলিকার সমাধান নিয়ে কাজ করে চলেছেন তিনি, যার সমাধান মেলেনি ১৫০ বছরেও। নরম পাথর খোদাই করে তৈরি ছোট্ট একটা চৌকো টুকরো। ওর মাঝে একটা জন্তুর ছবি এবং তার চারপাশে গোটা কতক ‘অক্ষর’। এমন প্রায় চার হাজার সিলমোহর পাওয়া গিয়েছে সিন্ধু নদীর পাড় বরাবর তৈরি হওয়া বিভিন্ন নগরের অবশেষ থেকে।এর মধ্যে হরপ্পা এবং মহেনজো-দড়োই প্রধান। কী লেখা ছিল ওই সিলমোহরে? অক্ষরগুলোর কী মানে? যে জন্তুর ছবি, তার নামই কি লেখা ওখানে? গত ১৫০ বছর ধরে সারা দুনিয়ার তাবড় প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং এপিগ্রাফারের দল এই প্রশ্নের জবাব খুঁজেছেন। শতাধিক বার দাবি করা হয়েছে ওই লিপির পাঠোদ্ধারের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনও দাবিই ধোপে টেকেনি। এই অবস্থায় সিন্ধুসভ্যতার শিলালিপি পাঠোদ্ধারে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক দিশা দেখালেন বঙ্গকন্যা বহতা। পেশায় এই সফটওয়ার বিশেষজ্ঞ দশ বছর ধরে নাছোড়বান্দার মতো পড়ে রয়েছেন রহস্যময় ওই লিপির মর্ম উদ্ধারে। এতদিন ধরে নানা গবেষক যে পদ্ধতিতে পাঠোদ্ধারের চেষ্টা করেছেন, বহতার কাজ তাঁদের থেকে একেবারে ভিন্ন পথে এগিয়েছে। তাঁর গবেষণা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রংশসিতও হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সিন্ধুসভ্যতার ভাষা নিয়ে তাঁর ছ’টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে তিনটে প্রবন্ধ বেরিয়েছে লন্ডনের ‘নেচার’ গোষ্ঠীর জার্নালে। বাকি তিনটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সেমিনারের পিয়ার রিভিউ প্রোসিডিংসে। বহতা ‘এই সময়কে’ বলেন, ‘আমি মনে করেছি, সিন্ধুলিপিতে লেখা বার্তাগুলো ‘শব্দচিত্রে’ (লোগোগ্রাফিক) লেখা। এতদিন ধরে প্রায় ৯০ শতাংশ গবেষকই লিপিগুলোকে ‘বানান করে’ বা রেবাস পদ্ধতিতে পড়ার চেষ্টা করেছেন। আমার মনে হয়েছে, ওঁরা ভুল পথে এগিয়েছেন।’ বহতাই প্রথম এমন নন। অতীতে পদ্মশ্রী ইরাভতম মহাদেবনের মতো পণ্ডিতও এই লিপিকে লোগোগ্রাফিক বলেই মনে করেছেন। আবার, অন্য দিকে আসকো পারপোলার মতো বিশ্ববরেণ্য ভারততত্ত্ববিদ ‘রেবাস পদ্ধতি’ ব্যবহার করেন এই লিপির পাঠোদ্ধারের জন্য।বহতা বলছেন, ‘ওখানকার লিপি উৎকীর্ণ সিলমোহর আর মাটির-ট্যাবলেটগুলো আজকের দিনের স্ট্যাম্প, মুদ্রা, টোকেন ইত্যাদির সঙ্গে তুলনীয় বলে আমার মনে হয়েছে। মুদ্রা বা স্ট্যাম্পের বিশেষ বিশেষ অংশে যেমন বিশেষ বিশেষ তথ্য দেওয়া থাকে, ঠিক সে রকমই এগুলোর বিশেষ বিশেষ স্থানে বিশেষ ধরনের বা শ্রেণির শব্দচিত্র থাকে, যারা ফাংশনালি এক রকমের। অর্থাৎ এই উৎকীর্ণ সিলমোহর আর ট্যাবলেটগুলো ফরমালাইজ়ড ডেটা ক্যারিয়ারস। এদের মধ্যে ‘ডকুমেন্ট স্পেসিফিক সিনট্যাক্স’ আর ‘লিঙ্গুইস্টিক সিনট্যাক্স’, এই দু’রকমের সিনট্যাক্স বা গঠন পদ্ধতিই দেখা যায়।’ গবেষক মনে করছেন, সিলমোহরে ব্যবহৃত জন্তুর ছবি হয়তো কোনও বিজ়নেস হাউজ় বা গিল্ডের চিহ্ন। পেশায় সফটওয়ার কর্মী হওয়ার পরেও নিয়ে পড়লেন কেন? জবাবে বহতা বলছেন, ‘গ্রিক লিনিয়ার-বি লিপির পাঠোদ্ধার করেছিলেন মাইকেল ভেন্ট্রিস। তিনি কিন্তু ইতিহাসবিদ বা এপিগ্রাফার ছিলেন না। স্থপতী ছিলেন। লিনিয়ার-বি লিপিটি তাঁর কাছে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। আমার কাছেও সিন্ধুলিপি এমনই একটা উত্তেজক ধাঁধা। এর সমাধানে ফোনেটিক্স, লিঙ্গুইস্টিকস, গণিত, পুরাতত্ত্ব, ইতিহাস, প্রাচীন সভ্যতার অর্থনীতি, কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজের মতো অনেক কিছুই প্রয়োজন।’


from Bengali News, Latest Bangla Sangbad, News in Bengali, বাংলা খবর - Ei Samay https://ift.tt/B6wEK0Y
Previous article
Next article

Leave Comments

Post a Comment

ads

Articles Ads 1

ads

Advertisement Ads