Ajker Khobor
Bangla News
Bengali News
Latest Bengali News - Ei Samay
বাংলা খবর
from Bengali News, বাংলা খবর, Bangla News, Ajker Khobor, Latest Bengali News - Ei Samay https://ift.tt/96jeAIH
মুম্বইয়ের পথে কৃষক লং মার্চ, ১৮-র রিপ্লে দেখছেন শিন্ডে https://ift.tt/fpNIuQK

প্রশান্ত ভট্টাচার্য কেউ কথা রাখেননি। পাঁচ বছর হয়ে গেল কেউ কথা রাখেননি। না দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। না একনাথ শিন্ডে। শিন্ডে আজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। আর সেদিনকার মুখ্যমন্ত্রী ফড়নবিশ এখন ডেপুটি। কৃষকদের কিন্তু সেই পথেই নামতে হয়েছে। মহারাষ্ট্র সরকার সম্পূর্ণরূপে চাষিদের কৃষি ঋণ মকুব, বন অধিকার আইনের যথাযথ রূপায়ণ এবং নদী সংযোগ প্রকল্প তথা বাঁধ নির্মাণের ফলে কৃষিজীবীদের উচ্ছেদ বন্ধ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিল। হয়েছিল কিন্তু হয়নি। ডবল ইঞ্জিন সরকারও পূরণ করেনি প্রতিশ্রুতি। অন্যদিকে, ২০১৮-র সেই লং মার্চের প্রধান স্থপতি অখিল ভারতীয় কৃষক সভার সভাপতি অশোক ধাওয়ালে সিপিআইএম দলে প্রোমোশন পেয়ে পলিটব্যুরোর সদস্য। অথচ কৃষকরা আছেন সেই তিমিরেই। পেঁয়াজ চাষ করে পেঁয়াজ না কেটেই চোখে জল! ঠিক ৫ বছরের ব্যবধান। সেই মার্চ মাস। আবার ‘লং মার্চ’ শুরু করলেন মহারাষ্ট্রের কৃষকরা। নাসিকের ডিন্ডোরি থেকে রাজধানী মুম্বইয়ের উদ্দেশে সেই পুরনো ১৮০ কিলোমিটারের যাত্রাপথ ধরে। যেন অ্যাকশন রিপ্লে। আমরা জানি, কৃষিঋণ মকুব, ভূমিহীন আদিবাসীদের জঙ্গলের জমির পাট্টা, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) , সেচের সুবিধা ও কৃষকদের পেনশনের দাবিতে মহারাষ্ট্রে গত এক দশক ধরেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে সিপিআইএমের কৃষক সংগঠন অল ইন্ডিয়া কিসান সভা বা এআইকেএস। ওই দাবিগুলি সামানে রেখে ২০১৮ সালের ৬ মার্চ নাসিক থেকে পায়ে হেঁটে মুম্বই পৌঁছে গিয়েছিলেন ৫০ হাজারেরও বেশি কৃষক। সংবাদমাধ্যমগুলো প্রথমদিকে সেই লং মার্চকে কলকে দিতে চায়নি। খবর করতে উৎসাহ দেখায়নি গোড়ালি ফাটা, পদতল ক্ষতবিক্ষত এই কৃষকদের মিছিল বা অভিযান নিয়ে। কিন্তু ততদিনে ‘অন্নদাতা’দের সেই মিছিলকে সমর্থন করে পাশে দাঁড়িয়েছিল মহারাষ্ট্রের নাগরিক সমাজ। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও সেই ‘লং মার্চ’-কে সমর্থন করেছিল। কেঁপে উঠরছিল দেশের কমার্শিয়াল ক্যাপিটল মুম্বই। শহরের সব পথ তখন পৌঁছে গিয়েছে দক্ষিণ মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে। প্রায় ৫০,০০০ কৃষক সমবেত হয়ে ১২ মার্চ মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ঘেরাওর কর্মসূচি পালন করবেন বলে পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। প্রমাদ গুণল দেবেন্দ্র ফড়নবিশের প্রশাসন। মহারাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে, ১২ মার্চ দুপুরবেলায় প্রতিবাদীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চালানোর প্রস্তাব দেওয়া হল। সেই প্রস্তাব মতো কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিদল রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় বসল সচিবালয়ে। অশোক ধাওয়ালের নেতৃত্বে এগারো জন কৃষক নেতার একটি প্রতিনিধি দল রাজ্য সরকারের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে চার ঘণ্টা বৈঠক করেন। মহারাষ্ট্র সরকারের প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ, রাজস্ব, ত্রাণ, পুনর্বাসন এবং পূর্ত দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী চন্দ্রকান্ত পাতিল, কৃষি এবং উদ্যানপালন দফতরের মন্ত্রী পান্ডুরং ফুন্ডকার, জল সম্পদ মন্ত্রী, গিরিশ মহাজন, আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রী, বিষ্ণু সাভারা ও সমবায়, বিপণন ও বস্ত্রমন্ত্রী সুভাষ দেশমুখ। বন অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলি খতিয়ে দেখার জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়, তাতে ছিলেন পূর্ত দফতরের মন্ত্রী একনাথ শিন্ডে।আলোচনায় কৃষক নেতারা সাতটি প্রধান দাবি তুলে ধরেন। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে, এগুলির মধ্যে, দুটির ক্ষেত্রে আশু তথা বাস্তবিক সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল – চাষিদের জন্য কৃষি ঋণ মকুবের ক্ষেত্রটিকে আরও ব্যাপকভাবে বিবেচনা করা আর নদী সংযোগ প্রকল্প তথা বাঁধ নির্মাণের ফলে মহারাষ্ট্রের কৃষিজীবীদের ক্ষেত্রচ্যূত করা হবে না এবং নদীর জল গুজরাতে সরবরাহ করা হবে না। বৈঠক শেষে সরকারের এই মনোভাব জানাতে কৃষকনেতা অশোক ধাওয়ালে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে এইসব প্রকল্পের জন্য উচ্ছেদ হবে না, হলেও তা হবে ন্যূনতম। আর মহারাষ্ট্র সরকার গুজরাতকে নদীর জল সরবরাহ করবে না। ১২ মার্চই মুখ্যমন্ত্রী ফড়নবিশ একটি লিখিত আশ্বাস দেন যে, কিষান সভার ছ' সদস্যের একটি কমিটির সঙ্গে আলাপ আলোচনা চালিয়ে রাজ্য সরকারের মন্ত্রীরা কৃষকদের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দাবিদাওয়াগুলিকেও বিবেচনা করবেন। সংবাদমাধ্যমের কাছেও মুখ্যমন্ত্রী জানান, 'কৃষক ও আদিবাসীদের উত্থাপিত অধিকাংশ দাবিদাওয়ার সঙ্গেই আমরা সম্মত হয়েছি। তাঁদের প্রধান দাবি ছিল - জঙ্গল এলাকার জমি তাঁদের নামে হস্তান্তর করা। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আমরা একটি বিশেষ দল গঠন করেছি এবং ছ' মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়াটি তারা সম্পন্ন করবে।' শুধু বিবৃতি আর সাংবাদিক বৈঠক করেই দেবেন্দ্র ফড়নবিশ তাঁর দায়িত্ব শেষ করলেন না, নিজের মন্ত্রিসভার তিনজন সদস্য - রাজস্ব মন্ত্রী চন্দ্রকান্ত পাতিল, পূর্তমন্ত্রী ও থানে জেলার ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী (গার্ডিয়ান মিনিস্টার) একনাথ শিন্ডে আর সেচমন্ত্রী ও নাসিক জেলার ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী গিরিশ মহাজনকে আজাদ ময়দানে পাঠিয়ে দিলেন। তাঁরা কৃষকদের জমায়েতকে উদ্দেশে করে বক্তব্য রাখেন ও সরকার যে কৃষকদের প্রতি সত্যিই সহানুভূতিশীল, তাও ব্যাখ্যা করলেন। কথায় বলে আশায় বাঁচে চাষা। একবুক আশা নিয়ে তাঁরা ফিরে গেলেন নিজবাসভূমে। আর পাঁচ বছর পরে সেই মার্চের রোদ গায়ে মেখে একবুক হতাশা নিয়ে নাসিক থেকে আবার মুম্বাইয়ের উদ্দেশে। হাতে লাল ঝান্ডা ও প্লাকার্ড। তাঁদের দাবি, ২০০৬ সালে প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে চালু হওয়া অরণ্যের অধিকার আইন অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে মহারাষ্ট্রে। ওই আইন কার্যকর হলে ভূমিহীন আদিবাসী কৃষকরা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমিতে চাষের অধিকার পেতে পারেন। পাশাপাশি, পেঁয়াজ, তুলো, সয়াবিন, সবুজ ছোলার মতো ফসলের সহায়ক মূল্য ও কৃষিঋণ মকুবের দাবি তুলেছেন তাঁরা। এবার ১৭ দফা দাবি ভিত্তিতে ১৩ মার্চ সোমবার থেকে ‘কিসান লং মার্চ’ শুরু হয়েছে। শামিল হয়েছেন ১০ হাজারেরও বেশি কৃষক। আন্দোলনকারীদের আশা, গতবারের মতোই মিছিল যতই মুম্বইয়ের দিকে এগোবে ততই দীর্ঘতর হবে। অন্যদিকে, সিঁদুরে মেঘ দেখছে একনাথ শিন্ডে প্রশাসন। কেন না, কৃষকদের দাবিকে সমর্থন করেছে উদ্ধব ঠাকরেদের মহা বিকাশ আঘাড়ি (MVA) জোট। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য পরের মরসুম থেকে কুইন্টাল প্রতি ২০০০ টাকা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য চেয়েছে আঘাড়ি জোট। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পারছেন মুখ্যমন্ত্রী একনাথ। মহারাষ্ট্র বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী সিন্ধে বলেন, ‘খরিফ মরশুমে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে লাল পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে। ফলের চাহিদার তুলনায় জোগান বেড়ে গিয়েছে আর দ্রুত দাম কমছে পেঁয়াজের। তবে, রাজ্যের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বড় ত্রাণ দেওয়া হবে। কুইন্টাল প্রতি ৩০০ টাকা ভর্তুকি দেবে সরকার।' যদিও কৃষকদের দাবি কুইন্টাল প্রতি কমপক্ষে ৬০০ টাকা ক্ষতিপূরণ। ফলে কৃষকদের তৃতীয় লং মার্চ যেভাবে মুম্বই শহরের দিকে ধেয়ে আসছে, তাতে অস্বস্তি বাড়ছে শিন্ডে-ফড়নবিশদের। আর কৃষকদের প্রত্যয়, রাস্তাই একমাত্র রাস্তা/দেশের অন্নদাতারাই ফেরেশতা।
from Bengali News, বাংলা খবর, Bangla News, Ajker Khobor, Latest Bengali News - Ei Samay https://ift.tt/96jeAIH
Leave Comments
Post a Comment