Ajker Bengali Khabar - Eisamay
Bangla News
Bengali News
Live Bengali News
বাংলা নিউজ
বাংলায় সর্বশেষ খবর
from Bengali News, বাংলা নিউজ, বাংলায় সর্বশেষ খবর, Live Bengali News, Bangla News, Ajker Bengali Khabar - Eisamay https://ift.tt/kqjnIUE
চোখের সামনে ডুবল গাড়ি, হোটেলের রিসেপশনটাও https://ift.tt/mM9Cbsh

শিলাদিত্য সাহা * ভৈথিরি, ওয়েনাড়আমার স্ত্রীর কী হবে? ও এখনও ২০৩ নম্বর রুমে আটকে আছে তো! সোমবার রাত দেড়টার সময়ে ওয়েনাড়ের ‘স্টার্লিং ভৈথিরি’ রিসর্টের রিসেপশনে দাঁড়িয়ে এই একটাই প্রশ্ন করে যাচ্ছিলাম সেখানকার স্টাফেদের।২৭ জুলাই যখন আমি আর আমার স্ত্রী রিসর্টে চেক-ইন করি, তখন জায়গাটা দেখে অপূর্ব লেগেছিল। কাবিনী নদীর একটা শাখার দু’পাড় জুড়ে সুন্দর কটেজ। চারদিক চা বাগান ঘেরা, সবটাই সবুজে সবুজ। সামনে একটা মিলিটারি ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখা শো-পিসের মতো।আর দু’দিন বাদেই এ কী দেখছি! চারদিকে শুধু জল। রিসর্টের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা কাবিনীর শাখা মাত্র এক ঘণ্টাতেই যেন গিলে খাচ্ছে গোটা জায়গাটা।এখান থেকে কী ভাবে মুক্তি পাব, মাথাতেই আসছিল না। আমাদের রুমে জল ঢুকতে শুরু করেছিল সোমবার রাত ১টা নাগাদ। তখনই পড়িমরি করে মাত্র ১০ মিনিটে স্যুটকেসে সব ভরে বেরিয়ে পড়েছিলাম রুম থেকে। এবং সবটাই এক কোমর সমান জলের স্রোতের মধ্যে। হোটেলের এক কর্মী আমাদের তখন নিয়ে যেতে চায় একটু উঁচু কোনও কটেজে।কিন্তু সেখানেও বা কতক্ষণ নিরাপদে থাকা সম্ভব? উত্তর আমার কাছেও ছিল না, হোটেলের কর্মীদের কাছেও নয়। তাঁরা ভাবতেই পারেনি, কেরালার পশ্চিমঘাটের পাগলপারা বৃষ্টি গোটা রিসর্টটাকেই ডুবিয়ে দেবে। মিলিটারি ট্রাক-এর মাথাটা শুধু জেগে থাকবে।বুঝতে পারছিলাম, আমাকেই কিছু না কিছু করতে হবে। কিন্তু এমনিতে যে পথে ২০৩ রুমে যাওয়া যায়, সেটা তো গলা জলেরও বেশি জলে ডুবে। আমি নিজেই একটু আগে প্রায় বুক সমান জল ভেঙে এসে আমাদের গাড়িটাকে জলে ভরা পার্কিং লট থেকে তুলে একটু উঁচু রাস্তায় রাখতে পেরেছি। ওদিকে আমার স্ত্রী একা একটা রুমে বসে বুঝতে পারছে না, আমি কোথায়, গাড়িই বা কোথায়। রিসেপশনের ফোনের লাইনও লাগছে না। আসলে ও জানতেও পারেনি, আমার চোখের সামনেই রিসেপশন, পিছনের ফুড কোর্ট তখন ডুবে যাচ্ছে কাবিনীর জলে।দেখলাম কোলে ৬ মাসের শিশুসন্তানকে নিয়ে সেই স্রোত পেরিয়ে বেরিয়ে আসছেন একজন গেস্ট। বাকিরা মাথায় স্যুটকেস নিয়ে কোনও ক্রমে জল ঠেলে এগনোর চেষ্টা করছে উঁচু কোনও জায়গায়। এ দিকে পার্কিং লট-এ আমার পাশেই রাখা একটা সাদা ইনোভা চোখের সামনে ডুবে গেল। ঘোলাটে খয়েরি জল তখন ক্রমশ কটেজগুলোকে গ্রাস করছে। আর এ সব কিছুর সঙ্গেই নাগাড়ে চলেছে আকাশভাঙা বৃষ্টি। সেই শব্দ কানে তালা লাগিয়ে দিচ্ছে। বিদ্যুৎও চলে গিয়েছে। রিসর্টের সবটা জুড়ে শুধুই অন্ধকার।এর মধ্যেই রাত আড়াইটে নাগাদ আমার স্ত্রী জানালো, কটেজের পিছনের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে একটা রাস্তা আছে। সেটা দিয়ে ও এবং আরও কয়েকজন বেরোতে পেরেছে উঁচু রাস্তায়। ওর সঙ্গে দেখা হলো আমরা নিজেদের রুম ছাড়ার ঘণ্টা দেড়েক পর। ততক্ষণে বাকি গেস্ট ও বাচ্চারা স্থানীয় একটা বাড়ির বারান্দায় এসে উঠেছে। হোটেলের কর্মীরা-ম্যানেজার লোক ডেকে সবাইকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে।রাত তিনটে নাগাদ শুনলাম, রেজ়িস এমকে নামে এক ব্যক্তি আমাদের সবার জন্য তার বাড়িটি খুলে দিয়েছেন। সেখানে ঢুকে অন্তত মাথার উপর ছাদ জুটল। কিন্তু জামাকাপড় তো সব ভিজে চুপচুপে। বদলানোরও কোনও উপায় নেই। কারণ স্যুটকেসটা কোনও ভাবে গাড়িতে ঢোকানো গিয়েছে। সেটা আর তখন বের করার পরিস্থিতিই নেই।রেজ়িস এমকে নিজের শুকনো জামা দিলেন পরার জন্য। তাঁর স্ত্রী-সন্তানরাও এগিয়ে এলেন গরম কফি নিয়ে। আরও আশ্চর্য হলাম রেজ়িস এর মুখে বাংলা শুনে। তারপর জানলাম, বিএসএফ-এ চাকরির সূত্রে কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়ামে ডিউটি করেছেন। উত্তর ২৪ পরগনাতেও ছিলেন কিছুদিন। আমাদের বাকি রাত কাটল ডিভানে, জেগে।মঙ্গলবার সকালেও বৃষ্টি ধরেনি। ফেরার জন্য যে কালভার্টটা পেরোতে হতো, সেটার উপর দিয়ে জল বইছিল। সাড়ে আটটা নাগাদ জলটা কালভার্ট-এর লেভেলে আসতেই আমরা গাড়ি নিয়ে ওটা পেরিয়ে মেন রোডে উঠলাম। তখন শুধুই ভাবছিলাম, এখান থেকে বেরোতে হবেই এবং প্রথম সুযোগেই। ধসের জেরে রাস্তার অর্ধেকটাই বন্ধ। তাতেও থামিনি।ভৈথিরি মেন রোড হয়ে সুলতান বাথেরি পেরিয়ে আমরা যখন বান্দিপুর টাইগার রিজ়ার্ভ-এর চেকপোস্ট-এর সামনে, ততক্ষণে ৪টে ফোন এসে গিয়েছে। সবার একই প্রশ্ন—তোরা ঠিক আছিস তো?সকালে মৃত্যুর সংখ্যা শুনতে শুরু করেছিলাম ৫ দিয়ে। মাত্র ২ ঘণ্টায় সেটা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে তখন শুনছি ৩১ হয়ে গিয়েছে। টানা ড্রাইভ করে বেঙ্গালুরু ফিরে শুনলাম তা বেড়ে ৮৯ হয়েছে। রাতের সঙ্গে বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও।খুব জোর বেঁচে গিয়েছি ঠিকই। কিন্তু এই পরিস্থিতিটা এড়ানোও যেতে পারত। আমরা সন্ধে সাড়ে সাতটা থেকে বলতে শুরু করেছিলাম, জল বাড়ছে-রিসর্টে ঢুকছে, আমরা কি বেরিয়ে যাব?তখন কিন্তু হোটেলের কর্মীরা একটাই উত্তর দিয়েছে, ‘ডোন্ট ওরি স্যর। নাথিং উইল হ্যাপেন।’ অ্যালার্ম কলটায় আগে সাড়া দিলে হয়তো কাউকেই এ ভাবে প্রাণ হাতে করে বেরোতে হতো না।
from Bengali News, বাংলা নিউজ, বাংলায় সর্বশেষ খবর, Live Bengali News, Bangla News, Ajker Bengali Khabar - Eisamay https://ift.tt/kqjnIUE
Previous article
Next article
Leave Comments
Post a Comment